কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের মনারকুটি গ্রামে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহন করেন লেখক হায়দার বসুনিয়া। নিভৃতচারী লেখক হায়দার বসুনিয়া প্রত্যন্ত গ্রামে থেকেও রচনা করে চলছেন তার সাহিত্যকর্ম। গত ৩০শে নভেম্বর তার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে উলিপুর ডট কমের পক্ষ থেকে তার একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহানুর রাহমান ও তরুণ কথা সাহিত্যিক জরীফ উদ্দীন।
উলিপুর.কমঃ কেমন আছেন?
লেখকঃ ভাল আছি, তোমরা কেমন আছ?
উলিপুর.কমঃ আমরা ভালো আছি, স্যার আপনি দীর্ঘ দিন থেকে লেখালেখি করে যাচ্ছেন, আপনার সাহিত্য জগতে পদার্পণ কত সালে?
লেখকঃ ১৯৫৯ সাল থেকে। তখন আমি ইন্টারমেডিয়েট-এর ছাত্র।
উলিপুর.কমঃ প্রথম দিকে আপনি কি লিখতেন? কবিতা নাকি গল্প?
লেখকঃ এই ছোট ছোট গল্প, কবিতাও লিখতাম টুকটাক।
উলিপুর.কমঃ আপনি লেখালেখির অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন?
লেখকঃ খোদার মদদ না পেলে সাধারনত লেখালেখি কলমের ডগায় আসে না, আমি নিজের ভেতর থেকে লেখালেখির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম।
উলিপুর.কমঃ ছোট বেলায় যা লিখতেন তা কি কোন পত্রিকায় ছাপা হতো?
লেখকঃ না, কোন পত্রিকায় ছাপা হয় নি, ডাইরিতে লিখে রাখতাম।
উলিপুর.কমঃ আপনার প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম কি?
লেখকঃ সেতু। এটা একটা উপন্যাস। এটা ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়। আর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘জেগে আছি’ ১৯৯৫ সালে।
উলিপুর.কমঃ আপনার লেখা বই প্রকাশের একটা দুরত্ব রয়েছে
লেখকঃ আমার লেখা অনেক বই ছিল, এখনো আছে কিন্তু প্রকাশক পাই নাই।
উলিপুর.কমঃ বাংলাদেশে প্রকাশনীর সংখ্যা তো অনেক।
লেখকঃ আসলে প্রকাশনী টাকা ছাড়া বই প্রকাশ করতে চান না।
উলিপুর.কমঃ আপনি অবশ্য ঠিক বলেছেন। স্যার, নুরুলদীনের বচন “জাগো বাহে কোনঠে সবাই” কথায় উনি জাগতে বললেন আর আপনি লিখলেন জেগে আছি, এই দুইটার মধ্যে কি কোন সম্পর্ক আছে? যেমন ধরেন নামের ক্ষেত্রে কিংবা চেতনার ক্ষেত্রে।
লেখকঃ না। কোন সম্পর্ক নেই।
উলিপুর.কমঃ আপনার প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যা কতটি?
লেখকঃ এখন পর্যন্ত ১৯ টি বই প্রকাশিত হয়েছে আরো অনেক বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
উলিপুর.কমঃ আপনার ১৯টি বইয়ের মধ্যে সেরা বই কোনটি?
লেখকঃ একেকটি বই একেক পটভুমিতে রচিত, লেখকের কাছে তার প্রতিটি বই শ্রেষ্ঠ। তারপরও একাত্তুরের লারমা সমাচার একটু ব্যতিক্রম।
উলিপুর.কমঃ এখানে আসার আগে শুনলাম আপনার একটা বই ২১শে বই মেলায় বেস্ট সেলার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে, কোনটি?
লেখকঃ আমিও গত কাল শুনেছি আমার ছেলের কাছে কিন্তু কোন বইটি তা এখন বলতে পারছি না।
উলিপুর.কমঃ বেস্ট সেলার নির্বাচিত হতে পেয়ে আপনার অনুভুতি
লেখকঃ বেস্ট সেলার নির্বাচিত হয়েছি শুনে ভালো লেগেছে। আনন্দের অনুভুতি (মুচকি হাসি)।
উলিপুর.কমঃ আমরা চাই একটা নয় আপনার সব বই-ই হউক বেস্ট সেলার। আপনার আমি বেশ কিছু বই পড়েছি তার বেশিরভাগই বইয়ে ফুটে তুলেছেন শিক্ষকদের জীবন যাপন। কোথাও আবার শিক্ষকই প্রধান চরিত্র।
লেখকঃ আসলে আমিও শিক্ষক তো।
উলিপুর.কমঃ আপনি যদি শিক্ষক না হতেন তবে কি হতেন?
লেখকঃ সরকারি চাকরীতে সবার এক ধরনের দূর্বলতা। আমার এসপির চাকরী হয়েছিল। আমি বাড়িতে নাই মা কাঁদতেন। আমার চিন্তায় খেতে পারেননি। মনে অস্তিরতা। এক কথায় পাগল প্রায়। শেষে চাকরী ছেড়ে দেই। শিক্ষকতা বেচে নেই।
উলিপুর.কমঃ আপনার লেখা অধিকাংশ বই পড়লে মনে হয় বেশির ভাগই সমাজের বাস্তব চিত্র। রূপকের আশ্রয় অনেকটা শিথিল।
লেখকঃ আমি বাস্তবতাকে ধারন করার চেষ্টা করি। বয়স তো আর কম হলো না। এই দুই চোখে কত কি দেখলাম!
উলিপুর.কমঃ আপনার লেখা উপন্যাস সেতু, নেপথ্য লীলাময়, তেপান্তরের মাঠ ঘুরে ইত্যাদিতে রেল সম্পর্কে জানা যায়।
লেখকঃ রেলগাড়ি আমাদের জীবনে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। আমাদের কোথাও যেতে হলে ট্রেনই ছিল বাহন। পরে বাসের আগ্রাসন আর সরকারের অবহেলায় বিলুপ্ত প্রায়।
উলিপুর.কমঃ আপনার তো অনেক বই প্রকাশ হলো। বেস্ট সেলার হলো আপনার বই তবুও আপনাকে নিভৃতচারী লেখক বলা হয়। আচ্ছা আপনার এই নিভৃতের কারণ
লেখকঃ নিভৃতই আমাকে ভালো লাগে। আমার মনে হয়, আমার লেখা তেমন নয়। পাঠকই বা কিভাবে গ্রহণ করবে? তাছাড়া আমি চাই আমার লেখাই আমার পরিচয় তুলে ধরবে, আমার পরিচয়ে নয়।
উলিপুর.কমঃ আপনি আমাদের তরুণদের জন্য কিছু বলুন।
লেখকঃ তোমাদের তরুণদের দেখলে আমি শক্তি পাই। তোমরাই তো আগামীর সব। তোমাদের ভালো হতে হবে, যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।