জরীফ উদ্দীন (উলিপুর): কুড়িগ্রামের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জনপ্রিয় টুপামারী বহুমূখী কৃষি কমপ্লেক্সের ‘দৃষ্টি নন্দন পুকুর’, যা স্থানীয় ভাবে জিয়া পুকুর নামে পরিচিত। এটি উলিপুর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই এ কে সি রোডের ১২৫ মিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে পুকুরটি অবস্থিত। পুকুরের পাড়ে স্বগর্বে দাড়িয়ে আছে বিভিন্ন বনজ ও ফলজ বৃক্ষ। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন কোন একটি বন দাড়িয়ে আছে আর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এক খরস্রোতা নদী। শীত কাল আসলে মনে হয় যেন মেলা বসেছে স্থানটিতে। এছাড়াও পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা এবং বিভিন্ন সময়ে দর্শণার্থীর ভীড় জমে চোখে পড়ার মত। শৌখিন মৎস শিকারীরা রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসে মৎস শিকারের জন্য।
কয়েকযুগ আগেও কিন্তু এখানে টুপামারী নামক কোন পুকুর ছিল না। ছিল নিচু এক জলাভূমি। সেই জলাভূমিতে মাছ চাষ কিংবা ফসল উৎপাদন কোনটাই সম্ভব ছিল না। এর প্রধান কারণ জলাভূমিগুলো ছিল খন্ড খন্ড ডোবায় ভরা। বর্ষাকালে জলাভূমিগুলো পানিতে ভরে গেলে সেখানে দেশীয় মাছ আশ্রয় নিত। সেই দেশী মাছের মধ্যে ছিল কৈ মাছ আর কৈ মাছের পোণা। স্থানীয় ভাষায় কৈমাছের পোনাকে কৈটিপি বা কৈটোপা বলা হত। এই কৈ টোপা থেকে জলাভূমির নাম টোপামারীর দোলা হিসাবে কালক্রমে ছড়িয়ে পরে, পরবর্তীতে যেটি টুপামারী নামে পরিচিতি পায়।
১৯৭৫ সালে তৎকালীন থানা প্রজেক্ট অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব জাফর উদ্দিন মন্ডল ও উলিপুর টিসিসিএ এর সভাপতি জনাব আব্দুল করিম মিয়া অত্র সংস্থার সমবায়ীদের ভবিষ্যৎ কল্যাণের উদ্দেশ্যে সংস্থার কার্যনিবার্হী পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক খন্ড খন্ড ডোবার মালিক জনাব আলেফ উদ্দিন মন্ডল, আজিজুল হক মন্ডল এর নিকট থেকে ১৫.৭৫ একর জমি ক্রয় করেন। ১৯৮০ সালে তৎকালীন থানার প্রজেক্ট অফিসার জনাব আবির উদ্দিন খান ও সংস্থার সভাপতি জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুট সংস্থার কার্যনিবার্হী পরিষদের সিদান্ত মোতাবেক আরও ৮.৭৪ একর জমি বিভিন্ন মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করেন। এরপর ঐ বছরই টিসিসিএ কর্তপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী জনাব মাইদুল ইসলাম-এর সক্রিয় সহযোগিতায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জনাব জিয়াউর রহমান টুপামারী পরিদর্শন করেন এবং সমবায়ীদের বৃহত্তর স্বার্থে খন্ড খন্ড ডোবাগুলি পূনঃখনন করে একটি পুকুর করার নির্দেশ প্রদান করেন। ঐ বছরই কাবিখার আওতায় খনন করে এটি একটি পুকুরে রুপান্তর করা হয়।
তথ্যসুত্রঃ http://www.breakingnews.com.bd/articles/agriculture/breakingnews.75022.details