।। নিউজ ডেস্ক ।।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির নামে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বরাদ্দের টাকা হরিলুট হচ্ছে আর বেশিরভাগ এলাকায় কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ব্র্যাক মোড় থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা ও অধিকারীপাড়ার থেকে পূর্বদিকে মকবুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ৪৩ হাজার ২৮০ টাকা করে বরাদ্দ দিলেও এখানে এক কোদাল মাটি কাটা হয়নি। নুরুল হকের পুকুরপাড় থেকে বারি মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের নামে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা স্থানীয়রা কেউ জানেন না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী, শমসের মিয়া ও ফজলু মিয়া।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চিলমারী উপজেলায় রয়েছে ছয়টি ইউনিয়ন। দারিদ্র্যপীড়িত এ উপজেলায় সরকারিভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় টেস্ট রিলিফ (টিআর)-৮৭টি প্রকল্পে ১২ কোটি ৪৮ লাখ ২ হাজার ৯০১ টাকা, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ১৩টি প্রকল্পে ৪ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ১০০ টাকা ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ৮টি প্রকল্পে ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ২১ টাকা এবং ১৪টি প্রকল্পে ২৩৬ দশমিক ৮৬০২ মে. টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়।
সরেজমিন জানা যায়, থানাহাট ইউনিয়নের চিলমারী মডেল থানার সামনে নুরুল হকের পুকুরপাড় থেকে বারি মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ১ লাখ ২৮ হাজার ২০০ টাকা ও মাটিকাটা নুরানী মাদ্রাসা থেকে ওমর হাজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ভরাটের জন্য ৭০ হাজার টাকা, সোনবোনপাড়া পাকা রাস্তা থেকে ইয়াকুবের বাড়ি পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৭০০ টাকা, ময়জুদ্দি মেম্বারের বাড়ি থেকে বৈরাগীরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কোনো কাজই করা হয়নি। অথচ কাগজ-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে জুনের মধ্যেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
মাটিকাটা নুরানী মাদ্রাসা থেকে ওমর হাজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কোনো কাজ হয়নি বলে জানান ওমর হাজী। বন্যার সময় পানি উঠলেও তার আগে ও পরে এ রাস্তার কোনো কাজ করা হয়নি। তবে স্থানীয়রা বলেন, নিজেরা চাঁদা তুলে বন্যার পরে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা হয়েছে।
চরউদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার স্কুলে ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার কান্ট্রি প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে মাটি কেটে দিয়েছিলেন। কিন্তু টিআর প্রকল্পে মাঠ ভরাটের নামে যে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সে টাকার মাটি কাটা হয়নি। আমি নিজেও জানি না আমার স্কুলের মাঠ ভরাটের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কোহিনুর রহমান বলেন, ‘কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্প কমিটিকে চেকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করা হয়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, এ উপজেলার মাটির মান ভালো না হওয়ায় রাস্তা সংস্কারে স্থায়িত্ব কম হয়। এরপর বন্যায় প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তিনি অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
সূত্রঃ bangla.report