।। নিউজ ডেস্ক ।।
সীমান্ত পরিবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলা এখন আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি বড় চালানসহ পাচারকারীদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ রুটের অস্তিত্ব পেয়েছে। তবে রাঘববোয়ালরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিভিন্ন রুটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার পিস ইয়াবা, গাঁজা, মদসহ বিভিন্ন মাদক পাচার হচ্ছে। আর এসব অপকর্মে জড়িত হচ্ছে নারী-পুরুষ, যুবকসহ শিশুরাও।
অপরদিকে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্ধ লেনদেন করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ৬০টি পয়েন্ট এবং ভারতের ৪৫টি পয়েন্ট দিয়ে আসে মাদক। আর এসব মাদকদ্রব্য একাধিক হাতবদল হয়ে চিলমারী-রৌমারী এবং রাজিবপুর দিয়ে নৌ-সড়ক পথে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নতুন কৌশল অবলম্বন করে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসছে মাদক পাচারের একাধিক সিন্ডিকেট চক্র। এসব পয়েন্টে ভারত-বাংলাদেশের প্রায় দুই সহস্রাধিকেরও বেশি রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী। রৌমারীতেই ছোট-বড় পাঁচ শতাধিকেরও বেশি। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব, সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির মদদে ক্রমেই বাড়ছে মাদকের ব্যবসা।
বাংলাদেশের রৌমারী-রাজিবপুর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪৬ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকাজুড়ে রয়েছে বালিয়ামারী, মাখনেরচর, আলগারচর, খেওয়ারচর, বকবান্দা, ঝাউবাড়ি, বড়াইবাড়িসহ প্রায় ১৯টি এলাকা। ভারতের সীমান্ত পয়েন্ট হল- শিংমারী, শিশুমারা, আসামের আলগা, গোধূলী, দ্বীপচর, কুকুরমারা, দিয়ারারচর, ঢালেরচর, কুসনিমারা, জোড়ডাংগা, সোনারপাড়া, মানকারচর, কাঁকরিপাড়া, কালাইরচর প্রভৃতি।
ফুলবাড়ী উপজেলার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় গোরকমণ্ডল, কিসনান্দ বকশী, বালাটারী, বজেরকুটিসহ রয়েছে ২০টি এলাকা। নাগেশ্বরী উপজেলায় সীমান্ত এলাকা হচ্ছে- প্রসাদেরকুটি, নাগরাজ, মডায়টারী, শিঙ্গেরভিটা, চাটামসহ ১৪টি স্থান।
এছাড়াও রয়েছে ভুরুঙ্গামারী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও জামালপুর সীমান্ত। ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭টির সঙ্গে ভারতীয় রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে ২৭৮.২৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩২ কিলোমিটার সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। একাধিক সোর্স, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবী জানায়, মাদক আসার প্রধান উৎসই হল হুন্ডির টাকা। এই হুন্ডির টাকা বন্ধ করা গেলেই মাদক ব্যবসা অনেকাংশে কমে যাবে। রৌমারীর আলগারচর সীমান্তে ভারতীয় ধুবড়ি জেলার মানকারচর থানার ফকিরবাট গ্রামের আমিরুল হক, সোনা মিয়া, ঝগড়ারচরের জহুরুলসহ প্রায় ৭-৮শ’ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। সিন্ডিকেটের মূলহোতারা পুরো নাম-ঠিকানা না বললেও জানায়, জামালপুরের বঙ্গ সীমান্তে ভারতীয় মোবাইল সিম ব্যবহার করে বাংলাদেশি-ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীরা আলাপচারিতা করে। ফলে স্থানীয় প্রশাসনও বলতে পারে না কারা এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জানান, সচেতনতা বৃদ্ধিসহ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীসহ মানি লন্ডারিংকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
সূত্রঃ jugantor, আহসান হাবীব নীলু