।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রোস্তম আলী নামে এক ছাত্র পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল পুড়িয়ে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরি করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন।
খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার বিকালে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রোস্তম আলীর পেট্রল তৈরি পদ্ধতি পরিদর্শন করেছেন।
মঙ্গলবার এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামের কৃষক মফিজুল হকের ছেলে রোস্তম আলী বাড়ির উঠানেই একটি আবদ্ধ তেলের ড্রামে বেশকিছু পরিত্যক্ত পলিথিন রেখে আগুন দিয়ে তাপ দিয়ে পলিথিন গলিয়ে ডিজেল, পেট্রল অকটেন ও এলপি গ্যাস তৈরি করেন। এসব জ্বালানি তার নিজস্ব মোটরসাইকেলে দিয়ে চালনা করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার দেয়া পেট্রল ও অকটেন ব্যবহারকারী এলাকার বেশকিছু মোটরসাইকেল আরোহী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার বিকালে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. রাশেদুল হক প্রধানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রোস্তম আলীর বাড়ি পরিদর্শন করেন।
এ সময় তাদের সামনেই রোস্তম আলী পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরি করে দেখান।
রোস্তম আলী জানান, ছোটবেলায় শীতকালে ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালানো হতো। সেখানে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল পোড়ানো হতো। পলিথিন পোড়া গিয়ে টোপে টোপে তরল পদার্থ পড়ত। কিন্তু সেটি পরিবেশবান্ধব ছিল না। এটি নিয়ে রিসার্স করা হয়।
তিনি জানান, আড়াই বছর আগে ২০১৭ সালের দিকে একদিন টিনের ছোট কৌটায় পলিথিন পুড়িয়ে তরল পদার্থ বের করি। সেগুলো শোধন করে পরীক্ষা করে দেখতে পাই এগুলো ডিজেল ও পেট্রল জাতীয় পদার্থ। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক পরিত্যক্ত পলিথিন সংগ্রহ করে একটি আবদ্ধ ড্রামের ভেতরে রেখে আগুনে অতিমাত্রায় তাপ প্রয়োগ করে গলিয়ে ফেলা হয়।
রোস্তম আলী জানান, বাষ্পায়িত হয়ে ডিজেল ও নল দিয়ে বের হয় পেট্রল-অকটেন। সর্বশেষ পাইপ দিয়ে বের হওয়া গ্যাসে আগুন ধরিয়ে দিলে তা জ্বলতে থাকে। যত তাপমাত্রা বেশি দেয়া হয় তত বেশি তরল পদার্থ নির্গত হয়। সেইসঙ্গে গ্যাস বের হয়। এসব সংগৃহীত তরল পদার্থ দুটি পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়। এক. ছাকন পদ্ধতি, দুই. থিতানো পদ্ধতি।
উদ্ভাবক রোস্তম আলী দাবি করেন, এ তরল পদার্থগুলো হাইড্রোকার্বন এবং এগুলোর ধর্ম ও বর্ণ ডিজেল, পেট্রল, অকটেন এবং নির্গত গ্যাস এলপি গ্যাসের মতো।
রোস্তম আলী মাত্র ৪ বছর বয়সে তার বাবাকে হারান। ছোটবেলা থেকেই তিনি গবেষণায় আগ্রহী। তিনি ২০১৩ সালে পান্থাবাড়ী বালাকান্দি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন।
২০১৭ সালে তিনি ডিপ্লোমা পাস করে অনলাইন কোর্সে ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশ (আইইবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি অনলাইনে অধ্যয়নরত।
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. রাশেদুল হক প্রধান বলেন, রোস্তম আলীর পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তৈরির বিষয়টি দেখলাম। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। রোস্তম আলীর যদি আরও উন্নতভাবে তৈরি করতে সহযোগিতা লাগে তাহলে তা করা হবে।
সূত্রঃ jugantor