।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুরে বন্যার পর খরার কবলে পড়েছেন কৃষকরা। বন্যার ধকল কাটিয়ে রোপা আমন চারা লাগালেও পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে আমন খেত। চারা ও পানির অভাবে অনেক কৃষক এখন রোপা আমন চারা লাগাতে পারেনি। অনেকে সেচ দিয়ে আমন খেত রক্ষার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকেই সেচ দিয়ে আমন চারা রোপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক জমি পতিত রেখে দিয়েছেন। বাজারে ধানের মূল্য কম থাকায় ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলায় ২৩ হাজার ৭ শত হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফসী ও স্থানীয় জাতের ধান চাষেবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চারা সংকট ও পানির অভাবে এখনও ১ হাজার ৯’শ ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চারা লাগানো সম্ভব হয়নি। এদিকে হাইব্রিড জাতের ৭’শ ৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭’শ ৭৯ মে মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চারা লাগানো হয়েছে ৭’শ ৫০ হেক্টর জমিতে। উফসী জাতের ১৮ হাজার ৬’শ ৮০ হেক্টর জমিতে ৫২ হজার ৬’শ ৭৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চারা লাগানো হয়েছে ১৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ২’শ ৪৮ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৫’শ ৬১ মেঃটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চারা লাগানো হয়েছে ৩ হাজার ৫’শ ৩০ হেক্টর জমিতে। ফলে চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আবুল কাশেম খেতের চারা গাছ বাঁচাতে স্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছে। এ সময় কথা হলে তিনি জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে রোপা আমন চারা লাগাই। কিন্তু দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় খেত পানির অভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে সেচ দিচ্ছি। ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, শুধু গবাদি পশু বাঁচানোর জন্য ধান চাষ করছি। উৎপাদন খরচ না উঠলেও খড় তো পাওয়া যাবে। এদিকে উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই জানান, জমিতে ব্রি-৪৮(ভাদাই) জাতের ধান চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে চারা লাগাইলাম। একই কথা জানালেন, উলিপুর পৌরসভার নারিকেলবাড়ী সন্ন্যাসী তলা গ্রামের বাবলু রাম বর্মন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের চারা সরবরাহের জন্য উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে ১৪ একর জমিতে কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যা এক সপ্তাহের মধ্যে বিনামূল্যে ৮’শ ৪০ জন কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হবে।