।। আব্দুল মালেক ।।
স্বাভাবিক জীবন ভালই কাটছিল তার। পরিবারের দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেনি। এইচএসসি পাশ করে ঢাকায় আসেন কর্মসংস্থানের জন্য। চাকরিও পান একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেন হতদরিদ্র বাবা-মা। সেই সোহেল রানা (২৫) এখন পরিবারটির দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজে লেখাপড়া করতে না পারলেও ছোট ভাই আবু কালামকে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখান সোহেল রানা। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই ঢাকা থেকে খবর আসে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘ ৬ বছর থেকে শত কষ্ট আর আর্থিক সংকটের মাঝেও চলছিল তার চিকিৎসা। কিন্তু কিছুতেই সে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। অর্থ সংকটে ধীরে ধীরে হতাশ হয়ে পড়ে পরিবার। ভাই আবু কালাম এখন দর্শন বিষয়ে এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র। লেখাপাড়র পাশাপাশি একটি বেসরকারি এনজিওতে কাজ করে নিজের লেখাপাড়া আর পরিবারের হাল ধরেণ।
এরমধ্যে ধীরে ধীরে সোহেলা রানার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে ১ বছর আগে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। শিকলেই বাঁধা হয়ে পড়ে সোহেল রানার জীবন আর স্বপ্ন গুলো। বিয়ে করে বাবা আব্দুর রশিদ আশ্রয় নেন উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামে। কিন্তু তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে আশ্রয় নেয়া ভিটেমাটি ও জমিজমা চলে যায় তিস্তার গর্ভে। তিন ছেলে আর এক মেয়েকে নতুন করে আশ্রয় নেন উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের ফুলবাহারকুটি গ্রামের বাঁধের রাস্তায়। আব্দুর রশিদের সাথে কথা বলার সময় হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, নিজেই চলতে পারিনা, ছেলের ঠিকমতো চিকিৎসাও করতে পারছি না। বাবা হিসেবে এটা যে কত কষ্টের তা বোঝাতে পারবো না। মনে হয় যেন গোটা পরিবারটি এখন সোহেল রানার শিকলের সাথে বাঁধা পড়ে আছে। হবে কী তার চিকিৎসা, খুলবে কী সোহেল রানার শিকল? একজন সহায় সম্বলহীন পিতার মুখে কী আবার কখনও হাসি ফুটবে না?