।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হওয়ায় বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়া মানুষদের ঘরে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে দীর্ঘ সময় তলিয়ে থাকায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় রোপা আমন বীজতলা ৫’শ ৯৫ হেক্টর, আউশ ধান ৩’শ ৮৪ হেক্টর, পাট ৬৫ হেক্টর, মসলা ৬৫ হেক্টর ও সবজী ২’শ ৬৭ হেক্টর সম্পুর্ণ রুপে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, ‘এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৭ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫’শ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
বন্যার পানি আবারও বাড়তে থাকলে সহসায় বাড়ি ফেরা হচ্ছে না অনেক আশ্রিত মানুষজনের। ফলে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন তারা। আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বত্রই এখন বন্যা আতংক বিরাজ করছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে ৪১ সেঃ মিটার, ধরলা নদের পানি কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে ৭৬ সেঃ মিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদির পানি ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩ সেঃ মিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকায় খাবার পানি, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, পশু খাদ্যের তীব্র সংকট রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ। চর ও দীপ চরের মানুষের অবস্থা আরও নাজুক। এসব চরাঞ্চলের চারণ ভুমি দীর্ঘদিন তলিয়ে থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে উপজেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় খাদ্য সংকটের চেয়ে জ্বালানী সংকটই তীব্র। ঘরে খাবার থাকলেও অনেক পরিবার রান্না করার অভাবে ঠিকমত খেতে পারছেনা। এদিকে এবারের বন্যায় উপজেলায় ৭ শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বলেন, ‘বন্যার পানি ঘরবাড়ি থেকে নামা শেষ না হতেই গত দু’দিন থেকে আবারও পানি বাড়িতে উঠা শুরু করেছে। এ অবস্থায় বন্যা কবলিত মানুষজনের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকায় সাপ আতংক বিরাজ করলেও জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে সাপে কাটা রোগীদের ভ্যাকসিন না থাকায় তাদেরকে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
এদিকে এখন পর্যন্ত বন্যা দুর্গত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩৫ মেঃ টন চাল, ১ হাজার ৮’শ প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ১৩০টি তাবু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।