।। আব্দুল মালেক ।।
শহর আলী সব কিছু হারিয়ে প্রায় দেড় যুগ আগে ব্রহ্মপুত্র নদে জেগে উঠা চর ঘুঘুমারীতে আশ্রয় নেন। বাড়ির চারদিকে সারিসারি গাছ। ছায়া শীতল পরিবেশে ব্রহ্মপুত্রের বুকে নির্বিঘ্নে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন।সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিতে ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুলে ফেঁপে উঠে। তার মতো চরের সব বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েন।পানির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকলেও ভাঙনে হারিয়ে যায় ভিটেমাটি। শহর আলী বলেন, ‘সউগ ভাসি গেলো বাহে। হামার আর কিছুই থাকিল নে। খামোয় বা কি আর থাকমোয় বা কটে। কাইও হামার এ্যটে খোঁজ নিবার আসিল না।’
উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর ঘুঘুমারী, সুখের বাতির চর, চর গেন্দার আলগা, উত্তর গেন্দার আলগা, নামাজের চরের শত শত ভিটেমাটি হারা মানুষের আহাজারী কেউ শুনতে পায় না।
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৫টি চরে পানির তীব্র স্রোত ও ভাঙনে গত ৩ দিনের ব্যবধানে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে আরো ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি। শনিবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে গেন্দার আলগা চরে গিয়ে কথা হয় কুদ্দুস মিয়া (৮০) এর সাথে। তিনি বলেন, ‘পানি কমার সাথে সাথে নদীর তীব্র স্রোত আর ভাঙন শুরু হয়। আকস্মিক ভাঙন শুরু হলে মুহূর্তে ঘরবাড়ি স্রোতে ভেসে যায়। কোন রকমে একটা ঘরের চাল রক্ষা করতে পারলেও সব কিছু চোখের সামনে নদীতে ডুবে যায়।’ সুখেরবাতির চরের আব্দুল হাকি (৭৫) বলেন, ‘কংক্রিটের সিড়ির উপর বানানো ৩টি টিনের ঘর চোখের পলকেই নদীতে ডুবে গেল। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।’ একই কথা জানান, উত্তর গেন্দার আলগার আব্দুস ছালাম (২৫), ছোমেদ আলী (৫৫), সোনা মিয় (৩২), চর গেন্দার আলগার আবু সাঈদ (৩৫), হামেদ আলীসহ অনেকে।
এসব চরের শত শত মানুষের ভিটেমাটি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। পানির প্রবল স্রোতে চোখের সামনে নিমিষেই নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে এসব অসহায় মানুষের সহায় সম্বল।
ভিটেমাটি হারানো এসব মানুষের কান্না যেন পৌঁছায় না রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বশীলদের কানে। বন্যা আর ভাঙনে এসব পরিবার এখন সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব দুর্গতদের অভিযোগ, সরকারি পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি এখন পর্যন্ত এসব এলাকা পরিদর্শন করেননি। ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার এলাকার মানুষের বাড়িঘর নদীতে ভেসে যাচ্ছে, অথচ কিছুই করতে পারছি না।’
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল বলেন, গত ৩ দিনের ব্যবধানে দেড় শতাধিক বাড়িঘরসহ গাছপালা নদীতে ভেসে গেছে। ভাঙনের শিকার নিঃস্ব পরিবারগুলোর জন্য ৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করে বন্যা পরিবর্তি সময়ে ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাঙলেও আমাদের কিছুই করার নেই।