|| আব্দুল মালেক ||
উলিপুরে টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙ্গনে কয়েক’শ একর ফসলী জমি ও অর্ধশতাধিক বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। এদিকে অবিরাম বর্ষনে ব্রম্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে ২২.৪৪ সেন্টিমিটার, ধরলা কড়িগ্রাম পয়েন্টে ২৫.৩৭ সেন্টিমিটার, তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ২৮.৭২ সেন্টিমিটার ও ব্রম্মপুত্র নদে ২৪.৮৯ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় বীজতলা ও রবি ফসলসহ বেশ কিছু স্থান ডুবে গেছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে উপজেলার সবকটি নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়ার গ্রাম, দাগারকুঠি, মাঝিপাড়া, নয়াদাড়া ও চরকলাকাটা, থেতরাই ইউনিয়নের জুয়ান সতরা, চর গোড়াইপিয়ার, হোকডাঙ্গাসহ বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট পুকুরসহ কয়েকশ একর আবাদী জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও ফসলী জমি, শতাধিক বাড়ি ঘর, দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতিয়া বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও শত বছরের পুরনো কবরস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের রতিদেবের চর ও কর্পূরার চরের পানিতে কয়েক’শ একর জমির বাদাম পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে বজরা ইউনিয়নের কালপানি বজরা, সাতলস্কর, পুরান বজরা হাটসহ চরবজরা গ্রামের পাউবো নির্মিত স্পার বাঁধ ধসে গেছে। নয়াদারা গ্রামের আইয়ুব আলী(৬৮),আবুল মন্ডল (৮২), খোতেজা বেগম(৫১), জয়নাল (৩২) সহ স্থানীয় অনেকে জানান, দেখতে দেখতে চোখের সামনে বাপ-দাদার ভিটে মাটি নদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। একই কথা জানালেন চর বজরা গ্রামের আবুল কাশেম (৪৭), আব্দুল মান্নান (৫৮) হরে কান্ত (৫২),পুরান বজরা গ্রামের সত্য শীল (৫৬), শ্যামলি রাণী (৪৬), মজিবর রহমান (৫৭) সহ অনেকে।
হাতিয়া গ্রামের মান্নার মিয়া (৪০) ও আব্দুল কাদের (৫২) বলেন, শেষ সম্বল বলতে বসত ভিটে টুকু ছিল সেটাও চার দিন পূর্বে নদী গর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে অন্যের জায়গায় কোন রকমে ঝুঁপড়ি তৈরি করে আছি। হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বিএসসি বলেন, জরুরী ভিত্তিতে নদীর ভাঙ্গন রোধ করা না হলে শতাধিক বাড়ি ও কয়েক’শ একর আবাদী জমি নদী গর্ভে চলে যাবে। সেই সাথে হাতিয়া বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রটি ভাঙ্গন কবলে পড়বে।
পাউবো উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা বিভিন্ন জায়গায় ৮ টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের জন্য আপদকালীন বরাদ্দের চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।