।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুরে ৮০০ বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারী ও হতদরিদ্র অসহায় নারীরা এখন স্বপ্ন দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। যাদের স্বপ্নের সারথী অবহেলিত ফরিদা ইয়াসমিন। প্রায় ১০ বছর আগে একটি বেসরকারি এনজিও ‘নারী’ প্রকল্পে চাকুরির সুবাদে এসব নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসব নারীরা যখন স্বাবলম্বীতার স্বপ্ন দেখছিলেন তখন এনজিওটির প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মায়ার টানে থেকে যান এসব নারীদের সাথে ফরিদা ইয়াসমিন। নতুন করে ‘নারী’ (নারী অ্যাসোসিয়েট ফর রিভাইভাল এন্ড ইনিসিয়েটিভ) নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। ফের শুরু হয় এসব অসহায় নারীদের সাথে পথচলা। শুরু করেন পাটের আঁশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদনের কাজ। গ্রামীণ এসব অবহেলিত নারীদের সৃজনশীল হাতের ছোঁয়ায় পাটের আঁশ থেকে তৈরি করেন শতরঞ্জি, কিচেন ম্যাট, ঝুড়ি, নানা ধরনের ব্যাগ, হাতপাখা, পাপোঁস, বালিশ কুশন, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, সিকা, শো-পিস, গহনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ। বদলে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর এসব নারীদের এখন সমস্যা আর্থিক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থিক সহযোগীতা পেলে এ অঞ্চলের নারীদের যেমন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে, তেমনি পাবে স্বপ্নের সুখী জীবন।
গত শনিবার উলিপুর পৌরসভার রামদাসধনিরাম এলাকায় গড়ে তোলা কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, এসব নারীদের কর্মচাঞ্চল্যতা। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। এসময় কথা হয় কর্মরত শ্রমিক ফাতেমা বেগম (৫৫), মমিনা বেগম (৪৫), শামসুন্নাহার (৪৮), কল্পনা (৪০), এজেমা বেগম(৫০) সহ অনেকের সাথে। তারা বলেন, প্রথমে ৫শত থেকে ২হাজার টাকা বেতন পেলেও বর্তমানে ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পাই। মমিনা বেগম বলেন, “আগোত হামার সংসারত অভাব ছিল, এখন আর অভাব অনটন নেই। ছাওয়া পোওয়া নিয়ে শান্তিতে আছি’। এছাড়াও অনেকেই বলেন, আাগে সামাজিক ভাবে তাদের খুবই অবহেলা করা হতো। এখন পরিবারের লোকজনসহ সবাই তাদের সম্মান করেন। কাজ করে উপার্জন করার আনন্দই আলাদা, যা এখন বুঝতে পারতেছি।
নারী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, শুরুতে ১০টি তাঁত কিনে শুরু করলেও বর্তমানে ৫৮টি তাঁত, ১০টি সেলাইমেশিন, ১০টি শতরঞ্জি তৈরির মেশিন দিয়ে পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, উৎপাদিত পণ্য শো-রুম খোলার পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পমেলায় অংশগ্রহণ নিয়ে বায়ারদের মাধ্যমে বাজার জাতের চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যাংক ঋণসহ কোন ধরনের আর্থিক সহযোগীতায় না পাওয়ায় সংকটে পড়তে হচ্ছে।
নারী সংগঠনের সভাপতি মোছাঃ ছবি বেগম বলেন, আমিও একজন অবহেলিত নারী ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, এসব নারী শত প্রতিকূলতার মাঝেও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সুখের ঠিকানা খুঁজে পাবে।