।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’- যত্ন প্রকল্পে গরিবের পরিবর্তে ধনীদের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রশাসন তালিকাকরণে আর্থিক লেনদেন না করতে এলাকায় মাইকিং করলেও উপকারভোগীদের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। টাকা নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আইএসপিপি প্রকল্পের আওতায় অতিদরিদ্র ও দুস্থদের জন্য যত্ন প্রকল্পের অধীনে আয় সহায়ক কর্মসূচির মাধ্যমে অতিদরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী ও পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৭ হাজার ৫৬৩ জন মা ও শিশুর পুষ্টির বিপরীতে নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী মা অন্তঃসত্ত্বাকালীন অবস্থায় চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৮০০ টাকা, ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর ওজন ও উচ্চতা পরিমাপের জন্য তিন মাসে এক হাজার ৫০০ টাকা, দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু এক হাজার টাকা এবং অন্তঃসত্ত্বা নারী ও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি ও মনোদৈহিক বিকাশে শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য তিন মাসে এক হাজার ৫০০ টাকা করে পাবেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দেখভালের জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা ও ইউএনওকে সভাপতি করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়। উপকারভোগীদের তালিকা করার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদকে দেওয়া হলে সংশ্নিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও তাদের লোকজন নাম তালিকাভুক্তির কথা বলে জনপ্রতি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ধনীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ইউএনও তালিকা প্রণয়নে কাউকে টাকা না দেওয়ার জন্য মাইকিং করেন। এরপর সংশ্নিষ্টরা টাকা নিয়ে তড়িঘড়ি করে তালিকা প্রণয়ন করে ২৬ এপ্রিল সংশ্নিষ্ট অফিসে জমা দেন। গত ২৪ এপ্রিল থেকে তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহু বাদশার বিরুদ্ধে ইউএনও কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা খইমুদ্দিন। একই অভিযোগ রয়েছে হাতিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে। ৯নং ওয়ার্ডের পুতুল রানী, মমিনা বেগম জানান, সিরাজুল মেম্বার ও মর্জিনা বেগম তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছেন। টাকা না দেওয়া তাদের সন্তানের কার্ডও জমা নেননি তারা। থেতরাই ইউনিয়নের রুবিনা বেগম বলেন, আমার বাচ্চার বয়স এক বছর। কার্ড করতে মেম্বারের কাছে গেলে তিন হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ইউএনওর সুপারিশ নিয়েছি, তবুও আমার নাম দেননি। অথচ সচ্ছলদের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলের পাড় গ্রামের রফিকুল ইসলাম, আশরাফ আলী ও আলামিন মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের কাছে পাঁচ হাজার করে টাকা চাচ্ছেন। টাকা না দেওয়ার কাগজপত্র ফেরত দেন। ধামশ্রেণী ইউনিয়নের সুফিয়া বেগম, উম্মে খাতুন, রোসনাসহ তালিকা থেকে বাদ পড়া শত শত হতদরিদ্র নারী অভিযোগ করেন, টাকা নিয়ে ধনীদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের টাকা নেওয়ার অভিযোগ উপজেলার সব ইউনিয়নে পাওয়া গেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বলেন, কেউ এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগও করেনি।
প্রকল্প সুপারভাইজার আয়শা সরকার জানান, বিষয়টি শুনেছি। তালিকা করার আগে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে বৈঠক করে আর্থিক লেনদেন না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। এর পরও টাকা নেওয়ার অভিযোগ আমাদের লজ্জায় ফেলেছে। ইউএনও মো. আব্দুল কাদের বলেন, অভিযোগ তদন্তের জন্য সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল, ১৬ই মে ২০১৯