।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধিনে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটির কাজ শেষ হতেই ভেঙ্গে গেছে। চার বছর ধরে ব্রিজটি নির্মাণ বা সংস্কার না হওয়ায় শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় মানুষজন নিজস্ব উদ্যোগে কাঠের সাঁকো তৈরি করে পারপার করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বুড়াবুড়ি বাজার হতে বোতলা জনতারহাটগামী রাস্তায় সাঁকোর পাড় এলাকায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৬ ফিট দৈর্ঘ্যের ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ রাস্তায় ব্রিজ নির্মাণের জন্য মেসার্স হামিদ ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গত ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্মাণ কাজ শুরু করে ওই বছরের এপ্রিলে কাজ সমাপ্ত করে চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করে নেয়।
দুদু মিয়া (৪২), গাজীউর রহমান (৬৫), সফিকুল ইসলাম (৩৮), আব্দুল হামিদ (৫৫), আলাপ মন্ডল (৬০) সহ অনেকেই জানান, ব্রিজটি নির্মাণের সময় ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ব্রিজটি ভেঙ্গে গেছে। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় বুড়াবুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, জনতার হাট উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৭ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে ৪ বছর ধরে দূর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কাঁঠের সাঁকো দিয়ে চলাচলকারী মানুষজনকে বিপাকে পড়তে হয়।
বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক বলেন, উপজেলার মাসিক সভায় ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তা এখন পর্যন্ত অনুমোদন হয়নি।
মেসার্স হামিদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হামিদ বলেন, ওই বছর বন্যার কারণে ব্রিজটি ভেঙ্গে গেছে। কাজ করেছি, বিল নিয়েছি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। ওই সময় যিনি দায়িত্বে ছিলেন এ বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন।
ব্রিজটি নির্মাণের সময় দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আনিছুর রহমানের (বর্তমানে গাইবান্ধা সদরে কর্মরত) সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই সময় বন্যার কারণে ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাস্তবে ব্রিজটি আকারে বড় হওয়ার দরকার ছিল কিন্তু তৎকালীন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের চাপে ৩৬ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই এলাকার লোকই ঢালাই করেছে। কাজের মানের ব্যাপারে কোন আপোষ করা হয়নি। উদ্বোধনের আগেই চুড়ান্ত বিল প্রদান করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ শেষ করে ঠিকাদার বিল নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর বিষয়টি সামনে আনলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা ছিল। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ার পর কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এর উত্তরে তিনি বলেন, ব্যাপারটা কনসিডার (বিবেচনা) করলে ভালো হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক, ব্রিজটির ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হবে।