।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে বদলে যাচ্ছে বুড়িতিস্তা নদী। খনন শুরু হওয়ায় বুড়িতিস্তা নদী পাড়ে শত শত মানুষের ঢল নামে প্রতিদিন। তারা স্বপ্ন দেখছেন আবার বুড়িতিস্তা প্রাণ ফিরে পাবে। কৃষিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বুড়িতিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা চলবে এ নদীকে ঘিরে।
এক সময় বুড়িতিস্তা নদীকে ঘিরে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। সেইসাথে তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকা চলত বুড়িতিস্তা নদীতে মাছ শিকার করে। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা নদীর ভাঙ্গণে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামের স্লুইস গেটটি নদী গর্ভে চলে যায়। পরে পাউবো অপরিকল্পিতভাবে বুড়িতিস্তার উৎস মুখে বাঁধ নির্মাণ করে বন্ধ করে দেয়। ফলে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বুড়িতিস্তা পাড়ের কয়েক শ মানুষের পেশা ও কৃষিতে বিপর্যয় শুরু হয়। এ সুযোগে কিছু ভূমিদস্যু বুড়িতিস্তা দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠে। ফলে দখল আর দূষণে এক সময়ের প্রমত্তা বুড়িতিস্তা মরা খালে পরিণত হয়। এ পরিস্থিতিতে ২০১৭ সাল থেকে বুড়িতিস্তা রক্ষায় আন্দোলন করে আসছিল উলিপুর প্রেস ক্লাব ও রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
জানা গেছে, ডেল্টা প্লানের আওতায় বুড়িতিস্তাসহ সারা দেশে ১৬টি নদ নদী খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ৬ জানুয়ারি অন-লাইনে ২টি গ্রুপের টেন্ডার আহবান করে। এতে কাজের যোগ্যতা অর্জন করে মেসার্স খায়রুল কবির ও মেসার্স তাজ মঞ্জিল। দুটি গ্রুপের মধ্যে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার ৩১ কিলো মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮০ ফুট প্রস্ত এ নদী খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বুড়িতিস্তা নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদাররা খনন কাজের জন্য এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ নদের পুরোজমি পুনরুদ্ধার করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে চিহ্নিত লাল নিশান ও লাল রং দেওয়া খুঁটি স্থাপন করা হয়। খননকাজ সম্পন্ন হলে নদী তীরবর্তি এলাকায় সেচ সুবিধাসহ বুড়িতিস্তা তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। এতে উপকৃত হবে উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। রক্ষা পাবে এলাকার জীববৈচিত্র।
উল্লেখ্য, বুড়িতিস্তা নদী রক্ষায় গত ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ মানববন্ধন, ২১ মার্চ বাইসাইকেল শোভাযাত্রা ও ১১ এপ্রিল বুড়িতিস্তার পাড়ে প্রতীকী পানির ঢল কর্মসূচি পালন করে সংগঠন দুটি।। এ ছাড়াও ৫ মে ঢাকাস্থ উলিপুর সমিতি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
সরেজমিনে, নদী খননের কাজ দেখতে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় লোকজনের সাথে। তারা বলেন, প্রমত্তা বুড়িতিস্তা যখন তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলে ঠিক তখনি এক শ্রেণির প্রভাবশালী নদীর বেশিরভাগ জমি দখল স্থাপনা, পুকুর খনন ও চাষাবাদ শুরু করেন। ধীরে ধীরে বুড়িতিস্তা মরা খালে পরিণত হয়। তারা আরো জানান, খননের মধ্য দিয়ে এখন মুক্ত নদের সেচ সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধাভোগ করতে পারবে স্থানীয়রা।
কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, বুড়িতিস্তা নদীর খনন কাজ সম্পন্ন হলে বুড়িতিস্তা তিস্তার দু’পাশে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে এবং সেই সাথে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রঃ kalerkantho