।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আলাদা ভবন বা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকরা ওই ভবনগুলোতেই ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বেঞ্চ ও অন্যান্য উপকরণেরও অভাব রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উলিপুড়ে ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলো, আঠার পাইকা জয়কালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতভিটা বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দলন বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝেল্লাআম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাগজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্গাপূর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডালিম পঞ্চানন পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াই মণ্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বপাড়া গোড়াই রঘুরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর সাদুল্লা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিশোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাচর রামরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াগ্রাম অধ্যক্ষ সিরাজুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিসামত মালতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খামার বজরা আসমত উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজবল্লভ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুনাইগাছ আকন্দবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজলডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ উমানন্দ আমবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম শিববাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রূপসাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট ও শৌচাগার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়র মাঠ পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে ঝেল্লা-আম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ ভবনের বেশির ভাগ জানালা-দরজা ভাঙা। ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে মাথায় পড়ে অনেক সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আহত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা খোলা আকাশের নিচে মাটিতে চট বিছিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুল হক বলেন, ‘২০১৫ সালের দিকে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ রকম পরিবেশে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চান না। ২১৯ জন শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬০ শতাংশ অনুপস্থিত থাকে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’
কাগজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দুটি ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদের ভেতরের রড বের হয়ে আছে, দরজা-জানালার বালাই নেই। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজুমা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের ছয়টি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এসব ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে।’
রূপসাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। শিক্ষার্থীরা পিটি করছে, অন্যদিকে নিমাই নামের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম হাতুড়ি দিয়ে বেঞ্চ জোড়াতালি দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান কুমার সরকার বলেন, ‘১৯৯৩ সালে ভবনটি নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এ ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী। বৃষ্টির দিনে ছাদ থেকে পানি ঝরে অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। দরজা-জানালা ভাঙা। তা ছাড়া শিক্ষা উপকরণেরও সংকট রয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক শাহ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা পাঠিয়েছি। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে এসব বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে।’ উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পিইডিপি-৩ দপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ভবনগুলোর কাজ শুরু হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের জানান, এরই মধ্যে কিছু ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ভবনগুলোর কাজও শুরু করা হবে।
সূত্রঃ kalerkantho