।। নিউজ ডেস্ক ।।
প্রায় ৪৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের রফিতন বেওয়া (৬৫) আর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সুইজারল্যান্ড প্রবাসী হওয়া খোদেজা রওফি মরিনো (৪৮) খুঁজছেন তার মা সহ পরিবারকে।
বেশ কিছু দিন ধরেই চলেছে এই দুই নারীর স্বজন খোঁজার পর্ব। তাদের মধ্যে এখনও দেখা হয়নি। পরস্পরের দেওয়া তথ্যে কিছু অমিল রয়েছে। ফলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি তাদের পরস্পরের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা।
এ অবস্থায় শনিবার রওফি ঢাকা থেকে সুইজারল্যান্ড ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছেন ইনফ্যান্টস ডু মনডে’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর রাকিব আহসান।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভার সাইকেল ডেলা গোলেহে স্কুলের শিক্ষক খোদেজা রওফি মরিনো দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের ঢাকায় আসেন তার মা সহ পরিবারের সন্ধানে। সঙ্গে আসেন রওফির স্বামী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জিইয়াস মরিনো।
এরপর ঢাকা থেকে তারা গত ১৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রামে পৌঁছান। উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ-খবর করে মা সহ পরিবারের কোনও সন্ধান না পেয়ে ১৯ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম থেকে আবার ঢাকায় ফেরেন তারা।
এ অবস্থায় এক প্রবাসী নারী তার মা সহ পরিবারের খোঁজে এসেছেন- এ কথা লোক মুখে শুনে শুক্রবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা শহরে আসেন উলিপুর উপজোর দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন গ্রামের রফিতন বেওয়া। সাথে ছিলেন ছেলে রফিকুল।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় রফিতন কে জানান, অর্জুন গ্রামের ছাত্তার আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন তিনি। ছাত্তার আলী ২২ বছর আগে মারা গেছেন। তাদের সংসারে ছিল দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। এই তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিল সাহেরা। ১৯৭৪ সালে সাহেরা হারিয়ে যায়। তখন সাহেরার বয়স ছিল ৮ বছরের মতো।
তিনি জানান, তিস্তার ভাঙনে অর্জুন গ্রামের বাড়িভিটা বিলীন হওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে থেতরাই শেখের খামার গ্রামে ওয়াপদা বাঁধে কোনও রকমে ঝুপড়ি তুলে বসবাস করছেন তারা।
মেয়েকে হারানোর কথা তুলে তিনি বলেন, ‘মঙ্গার সময় ঘরোত খাবার আছিল না। ভোকের ঠ্যালায় ছাওয়া মোর কোন পাকে গেইছে কবার পাং না। সেই যে গেইছে-আর বাড়িত ঘুরি আইসে নাই।’ এদিকে রওফির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে হারিয়ে যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৩ বছর। তখন তার নাম ছিল খোদেজা। হারিয়ে যাওয়ার পর চিলমারীতে কর্মরত ছিন্নমুকুল নামক সংগঠন তাকে খুঁজে পেয়ে আশ্রয় দেয়। এখানে চার বছর থাকার পর ১৯৭৮ সালের দিকে সুইজারল্যান্ডের রওফি পরিবার তাকে দত্তক নেয়।
রওফি তারপর নতুন বাবা-মায়ের সাথে চলে যান জেনেভা শহরে। সেখানেই পড়াশুনা শেষ করে জেনেভার সাইকেল ডেলা গোলেহে স্কুলের শিক্ষক হিসেবে ২০০১ সাল থেকে কাজ করছেন। তার বিয়ে হয়েছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জিইয়াস মরিনোর সাথে। তাদের সংসারে ইলিয়াস নামের ৫ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
১৯৭৪ সালে ছিন্নমুকুল নামক উন্নয়ন সংগঠনে কর্মরত থাকা আনিছুর রহমান জানান, সে সময় ছিন্নমুকুলের চিলমারী আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ জন শিশু ছিল। প্রতি ৫০ জন শিশুর দেখভালের জন্য একজন করে টিম লিডার ছিলেন। খোদেজা যে টিমে ছিল সেই টিম লিডার ছিলেন তিনি। এখান থেকে ১৯৭৮ সালে ৩৬ জন শিশুকে বিদেশিদের কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছিল। এদের বাবা-মা বা পরিবারের কোন সন্ধান পাওয়া না যাওয়ায় সরকারের অনুমোদন নিয়ে দত্তক দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে খোদেজাও ছিল।
এদিকে রওফির কুড়িগ্রামে আসার সময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে তার স্বামী জিইয়াস মরিনো, জেনেভা বাংলা পাঠশালার পরিচালক ও সুইস বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক এবং ইনফ্যান্টস ডু মনডে’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর রাকিব আহসান এসেছিলেন।
ইনফ্যান্টস ডু মনডে’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর রাকিব আহসান জানান, বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে এবং সরেজমিন ঘুরেও রওফির পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর রফিতন বেওয়া কথা রওফি শুনেছেন। কিন্তু তার দেওয়া বয়স ও নামের মিল না থাকায় এনিয়ে রওফির মধ্যে আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি।
সূত্রঃ samakal