নিউজ ডেস্ক: ব্রয়লার মুরগি ও দুগ্ধ খামারে সুবিধা করতে না পেরে এবার টার্কিতে সম্ভাবনা খুঁজছেন কুড়িগ্রামের বেকার যুবকরা। ১০০টি টার্কির খামার করে খামারপ্রতি অর্ধলাখ টাকা লাভ করছেন অনেকে। তবে আকারে বেশ বড় ও নতুন প্রাণী হওয়ায় টার্কির বাজার এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এ কারণে খামারিদের বিপণনে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এর আগে স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় ব্রয়লার মুরগিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কুড়িগ্রামের বেকার যুবকরা। ১০ বছরের মধ্যে সহস্রাধিক খামার গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ফিডের অনিয়ন্ত্রিত বাজার ও ব্রয়লারের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। এরই মধ্যে অন্তত ৩৫ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। একই অবস্থা দুগ্ধ খামারিদেরও। গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ক্রেতা সংকটে খামার লাভজনক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে টার্কির খামার করে অনেকে এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সফলদের দেখাদেখি নতুন খামার গড়ে উঠছে। স্বল্প সময়ে অধিক লাভ আসছে বলে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে টার্কি পালন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে জেলায় গড়ে উঠেছে ২৫টি বাণিজ্যিক খামারসহ ছোট-বড় শতাধিক খামার। যদিও বিপণন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় খামারিদের লাভের টাকার একটা বড় অংশ যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।
বছরতিনেক আগে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা ব্রিজের পূর্ব পাড়ে জেলার প্রথম টার্কি খামার গড়ে তোলেন আব্দুল মজিদ রিপন। খুলনা থেকে ১০০টি বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন এই যুবক। চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই বিক্রি উপযুক্ত হয়। তবে স্থানীয়দের কাছে একেবারে নতুন জিনিস হওয়ায় বগুড়ার পাইকার ডেকে এনে বেচতে হয়েছে তাকে। অবশ্য এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার খামারে চার শতাধিক টার্কি আছে। নিজেই বাচ্চা উৎপাদনও করছেন।
আব্দুল মজিদ রিপন জানান, একটি টার্কির বাচ্চা লালনপালন করে আট থেকে ১০ কেজি ওজনের করতে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি টার্কি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। সব ঠিকঠাক থাকলে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করা সম্ভব বলে জানান এ টার্কি খামারি। এছাড়া এখন তিনি টার্কির বাচ্চা প্রতি পিস বিক্রি করছেন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে।
আব্দুল মজিদের দেখাদেখি এ এলাকায় আরো বেশ কয়েকটি খামার গড়ে উঠেছে। অনেকে বাড়িতে দেশী হাঁস-মুরগির সঙ্গে কয়েকটি করে টার্কি পালন করছেন।
চার মাস আগে আব্দুল মজিদের কাছ থেকে পরামর্শ ও টার্কির বাচ্চা নিয়ে ছোট আকারে খামার শুরু করেছেন নাগেশ্বরী উপজেলা শহরের ইদ্রিস আলী ও নেওয়াশী গ্রামের বাপি পাল। মাসখানেকের মধ্যে তাদের টার্কি বিক্রির উপযুক্ত হবে। এ দুই নতুন খামারি বলেন, ব্যবসাটা অবশ্যই লাভজনক। প্রথম দফায় একজন ১০০টি, অন্যজন ৫০টি দিয়ে খামার শুরু করেছেন। এগুলো বিক্রি করে খামার আরো বড় করার পরিকল্পনা করছেন তারা।
টার্কির সম্ভাবনা বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার আবহাওয়া টার্কি পালনের উপযোগী। জেলার বেকার যুবকরা নিজ উদ্যোগে টার্কির খামার গড়ে তুলছে। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া শাকসবজি, ঘাস ও বিভিন্ন উদ্ভিদের পাতা টার্কির প্রধান খাবার। এরা আচরণেও বেশ শান্ত। ফলে টার্কি পালনে খরচ কম, লাভের সম্ভাবনা বেশি।
সুত্র:বণিক বার্তা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮