নিউজ ডেস্ক:বিদ্যালয় মাঠের এক পাশে ছোট্ট একটি একতলা ভবন। বারান্দায় স্কুলব্যাগ নিয়ে বসে থাকা গোটা পঁচিশেক শিশু গলা মিলিয়ে কবিতা পড়ছে শিক্ষকের সঙ্গে। শিক্ষক রিনা জানালেন, শ্রেণীকক্ষের সংকট, তাই প্রাক-প্রাথমিকের পাঠদান এভাবেই হয়। গরমকালে তেমন সমস্যা না হলেও শীতকালে ঠাণ্ডা মেঝেতে শিশুদের বেশ কষ্ট হয় সে কথাও জানান তিনি।
এটি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মজিদের পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হয়। ১৯৯৭ সালে তিন কক্ষের একটি ভবন নির্মাণ করে দেয়া হয়। শ্রেণীকক্ষ সংকটে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে দুই শিফটে পাঠদান করতে হয়। আর প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক ও দাপ্তরিক কাজ চলে সিঁড়ির কাছে বানিয়ে নেয়া একটি ছোট্ট ঘরে।
শিক্ষকরা জানান, শ্রেণীকক্ষ সংকটের পাশাপাশি এখানে পর্যাপ্ত বেঞ্চ নেই। যা আছে তার বেশির ভাগ ভাঙাচোরা। প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল গফ্ফার জানান, শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে প্রাক-প্রাথমিকের পাঠদান হয় বারান্দায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মজিদের পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় কুড়িগ্রাম জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই রয়েছে শ্রেণীকক্ষ সংকট। শিশুদের অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়।
চিলমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় ৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বিদ্যালয়গুলোয় মাত্র তিনটি করে শ্রেণীকক্ষ আছে। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা শ্রেণীকক্ষ নেই। তবে মজিদের পাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় ১ হাজার ২৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭৫টি বিদ্যালয় ২০১৩ সালে সরকারি করা হয়, এগুলোতে মাত্র তিনটি করে শ্রেণীকক্ষ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চিলমারী উপজেলার মজিদের পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অবস্থা প্রায় সব নতুন সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সবগুলোতেই দুই শিফটে পাঠদান করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের পাঠদান করা হয় খোলা বারান্দার মেঝেতে অথবা কোনো কক্ষের এক কোনায় অথবা গাছতলায়। ফলে প্রাথমিক পাঠদানে যথেষ্ট যত্ন ছাড়াই শিশুশ্রেণী পার করছে কুড়িগ্রামের অসংখ্য শিশু।
তবে রাজারহাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, রাজারহাট উপজেলায় ৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টিতে নতুন ভবন তৈরি হওয়ায় সেখানে শ্রেণীকক্ষ সংকট নেই। আর কিছু বিদ্যালয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয় ভবনের পাশে প্রাক-প্রাথমিক বা শিশু শ্রেণীর জন্য টিনশেড ঘর তৈরি করা হয়েছে।
শ্র্রেণীকক্ষ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, আমার জেলার যেসব বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষ সংকট রয়েছে, সেসব বিদ্যালয়ে পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় নতুন ভবন নির্মাণের জন্য লিখেছি। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি বিদ্যালয়গুলোয় পর্যায়ক্রমে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
সুত্র:বণিক বার্তা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮