।। নিউজ ডেস্ক ।।
আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে গত কয়েক বছর ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি খাচ্ছে উলিপুরের মানুষ। ফলে সেখানকার গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে আর্সেনিকোসিস। এরই মধ্যে শিশুসহ শতাধিক নারী-পুরুষ আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। ফলে নেফরাসহ পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আর্সেনিক আতঙ্কে ভুগছে।
২০০১ সালে উপজেলার দলদলিয়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নে আর্সেনিক রোগে শত শত মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে জনস্বাস্থ্য বিভাগ দলদলিয়া ইউনিয়নের হোসেনপাড়া, দামুরপাড়া, খাঁপাড়া, মিয়াপাড়া, গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফরা ও নন্দু নেফরা গ্রামে খাবার পানি পরীক্ষা করে শতকরা ৯০ ভাগ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পায়। এরপর জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে আর্সেনিক ফ্রি নলকূপ স্থাপন করা হয়। উপজেলার মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের গ্রাম নেফরায় ২০০৪ সালে জনস্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে জিওবি-৪ প্রকল্পের আওতায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ করা শুরু হয়। পরে পাইপলাইন সম্প্রসারণ করে পার্শ্ববর্তী নন্দু নেফরা, সাতদরগা ও এমপির গ্রামের দুই হাজার পরিবারে সুপেয় পানি দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওই গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে আর্সেনিকযুক্ত পানি খাচ্ছে। ফলে গ্রামে আবারও দেখা দিয়েছে আর্সেনিকোসিসসহ পেটেরপীড়া, ডায়রিয়া, আমাশয় ও ঘা-পাঁচড়া।
উলিপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, আর্সেনিক একটি ভয়াবহ রাসায়নিক বিষ। মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত পানি খেলে স্কিন ক্যান্সার, রক্তশূন্যতা ও পেটেরপীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারাও যেতে পারে।
নেফরা গ্রামের ভিক্ষুক হাজিরন বেওয়া বলেন, ‘বাবা আগে ভালো পানি খাইছি। এখন ভালো পানি নাই তাই বাধ্য হয়ে বিষ পানি খাচ্ছি।’
নেফরা গ্রামীণ পানি সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি চালু করতে জাতীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার নিয়ে সংশ্নিষ্ট বিভাগের জেলা ও উপজেলা কার্যালয় থেকে প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।
প্রকল্প চালু ও গ্রামগুলোতে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাদের।
জনস্বাস্থ্য রংপুর বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, জিওবি প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। শিগগিরই সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্পটি চালুর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
সূত্রঃ samakal