।। নিউজ ডেস্ক ।।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে কুড়িগ্রাম-২ (সদর, ফুলবাড়ি ও রাজারহাট) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। এসব প্রার্থী দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। এ কারনে ভোটের আমেজ এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও। পছন্দের দল ও প্রার্থীকে জেতাতে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ।
আসনটি জেলা সদরে হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে এর গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ জেলা সদর দখলে নিয়ে সব রাজনৈতিক দল সমগ্র জেলায় তাদের দলীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকেন। তবে এ আসনের জাপা দলীয় এমপি তাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করায় জাতীয় পার্টিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। জাপার দুর্গখ্যাত এ আসনটি ধরে রাখতে ইতোমধ্যে জাপা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমেদকে দলে নিয়ে জেলা জাপার আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকান্ড স্থবির থাকলেও বর্তমানে পালে হাওয়া লেগেছে। এ আসনের জাপা নেতা কর্মীরা এখন অনেকটাই চাঙ্গা। জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, শাসকদলের বিরুদ্ধে শিল্পপতি পনির উদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী করা হলে আসনটি ধরে রাখা সম্ভব। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মুহাম্মদ আব্দুস সালাম ও প্রয়াত তাজুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি চৌধুরী সফিকুল ইসলামও মনোনয়ন চাইবেন। মহাজোট হলেও জাতীয় পার্টির দূর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হলে তারই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। জোট-মহাজোট না হলে জাপার সাথে আওয়ামী লীগের লড়াই হবে মর্যাদার।
অন্যদিকে এ আসনটি দখলে নিতে মরিয়া শাসকদল আওয়ামী লীগও। তবে শাসক দলে উপদলীয় কোন্দল থাকায় মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বদ্বিতা হওয়ায় বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ জাফর আলীর পক্ষে স্থানীয় বিএনপি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রকাশ্যে অবস্থান নিলে দলীয় নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত থাকেন। তখন থেকেই দলে গ্রুপিং চরমে উঠে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা।
এ রকম পরিস্থিতিতে জেলায় সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড দৃশ্যমান হলেও নেতাকর্মীদের কারণে তা জনগনের মাঝে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা ব্যক্তিগত প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। সব মিলিয়ে শাসক দলের প্রার্থী যেই হোক না কেন, কোন্দল মেটাতে ব্যর্থ হলে তাদের পক্ষে আসনটি দখলে নেয়া কঠিন হবে বলে সচেতন মহলের ধারণা। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক রাকসু নেতা অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন, মেজর জেনারেল (অব.) আ ম সা আ আমিন, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. হামিদুল হক খন্দকার, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন দুলাল, জেলা পরিষদ সদস্য মাহবুবা আক্তার লাভলী, শাহানা পারভীন এবং জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান। এসব নেতার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও একে অপরের সমালোচনায় মূখর থাকায় জেলায় সরকারের দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের দৃষ্টির অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে জেলা সদরে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র সাংগঠনিক তৎপরতা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে সদরের এ গুরুত্বপূর্ণ আসনটি তাদের দখলে নেয়া বেশ কঠিন হবে। জেলা বিএনপি’র সভাপতি তাসভির উল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা উভয়ই সদরের বাসিন্দা না হওয়ায় এবং শহরে স্থায়ীভাবে অবস্থান না করায় এখানে দলটির সাংগঠনিক ভীত বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এমনকি এখানে দলের কোন ডাক সাইডে নেতা নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে এ দু’নেতা দলের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় না থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পরে।
এ রকম পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রার্থীর চেয়ে অধিকাংশ নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে দাবি করছে। তাদের মতে এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীকে মনোনয়ন দিলে আসনটি নিশ্চিত বিএনপি’র দখলে আসবে।