।। আব্দুল মালেক ।।
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চলছে ভোটের আলোচনা। পছন্দের দল ও প্রার্থীকে জেতাতে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররা। তবে জোট-মাহাজোটে হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারে সে সম্ভাবনা। শাসকদল আওয়ামী লীগের হাফ-ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী প্রচারনায় থাকলেও বেশীরভাগ প্রার্থীরই ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন আছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সম্প্রতি উপ-নির্বাচনে জিতিয়ে এসে এখন অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে। অল্প সময়ে নানা মুখি উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রস্তুতিসহ উপজেলায় আধুনিক সেবা দেয়ায় ঘোষনায় আবার চমক দেখাতে পারেন তিনি।
এদিকে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে অনেকটা শক্তিশালী এ উপজেলায়। তারাও ছাড় দিতে নারাজ। এছাড়া বর্তমানে জাতীয় পার্টি জেপি প্রার্থী হিসেবে তিতাস গ্যাসের সাবেক মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মন্জুরুল হক মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনিও আগামী নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াতে পারেন।
এ অবস্থায় জামায়াত ও বাম দলগুলোর সমর্থনও অনেকটা নির্ভর করবে ভোটে জয় পরাজয়ের হিসাব নিকাশে। উপজেলার শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজারসহ রাস্তা ঘাটের গাছে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের বিলবোর্ড ও পোষ্টার। দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে চলছে উঠান বৈঠক, দলীয় কর্মী সভা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত কুড়িগ্রাম-৩ আসনটি দখলে নিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টি জেপিও।
’৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবার হত্যার পর থেকে এই আসনটি বিএনপির দখলে চলে যায়। এরপর রাজনীতির পালা বদলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ.এম এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর জাতীয় পার্টির দখলে আসে এ আসনটি। দীর্ঘ দিন পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। কিন্তু দীর্ঘসময় এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোন সংসদ সদস্য না থাকায় আওয়ামী লীগ বিদ্বেষি অবস্থান তৈরি হয়। এর প্রভাব পড়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন গুলোতে। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা নির্বািচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৩ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করলেও বাকি ইউনিয়ন গুলোতে জাতীয়পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের মূল কারন ছিল দলীয় কোন্দল। সব মিলিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি।
৯৬ সালের নির্বাচনে সাবেক রাষ্টপতি এইচ এম এরশাদ নির্বাচিত হয়ে আসন ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে তার ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালু নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জাপা প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওঃ মতিয়ার রহমান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী এ কে এম মাঈদুল ইসলাম বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে মহাজোট প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে মাঈদুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। মাঈদুল ইসলামের মৃত্যুতে এ আসনটি শুন্য হলে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই এর উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার বিজয়ী হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সব চেয়ে বেশী। আওয়ামী লীগ মনোনীত ২৫শে জুলাইয়ের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী অধ্যাপক এম.এ.মতিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলী, সাধারন সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজাদুর রহমান তালুকদার সাজু, ত্রান ও সমাজকল্যাণ কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, অধ্যক্ষ আহসান হাবীব রানা। শাসকদলের এসব মনোনয়ন প্রত্যাশি গনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি তাসভীর উল ইসলাম। তিনিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। তবে কেন্দ্রিয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা যুবদল কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক তিনিও গণসংযোগ করছেন।
সম্প্রতি প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক জাতীয় পার্টি (জেপি)তে যোগদান করে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করছেন। ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে সারা ফেলেছেন জেপি’র এ নেতা।
২৭ কুড়িগ্রাম-৩ আসনটি উলিপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৩ হাজার ৫শ ৬৭, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭শ ৩ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪ জন।