নিউজ ডেস্ক:
আধুনিক বাণিজ্যিক কৃষির যুগে এক ফসল তুলে পরবর্তী ফসলের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার দিন শেষ। ১২ মাসই ফলবতী থাকছে জমি। একই জমিতে বারোমাসি ফল অথবা মিশ্র ফসল আবাদ করে জমির উৎপাদনশীলতা ও নিবিড়তা উভয়ই বাড়িয়ে তুলছেন কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম বিএসসি টারী গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ যখন ধান আর আলু চাষ করে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন, তখন রংপুরের এক নার্সারিতে গিয়ে চোখ খুলে যায় তার। বছরখানেক আগে সে নার্সারিতে থাই পেয়ারা দেখে রীতিমতো চমকে যান।
বাড়িসংলগ্ন ৬০ শতক জমি উঁচু করে সেখানে রংপুর থেকে আনা ৪০০ থাই পেয়ারার চারা দিয়ে বাগান করেন আব্দুল লতিফ। এক বছরের মাথায় পেয়ারা ধরতে শুরু করেছে। একই গাছে পেয়ারা বড় হতে হতে নতুন ফুল আসতে শুরু করে। ফলে ১২ মাসই ফসল সংগ্রহ করতে পারছেন তিনি। তিন মাস আগেও বাগান থেকে পর্যায়ক্রমে প্রায় ২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন। ছোটগুলো ১৫-২০ দিনের আবার বিক্রির উপযুক্ত হবে।
আব্দুল লতিফ এখন ভাবছেন, আরো কিছু জমি উঁচু করে বারোমাসি পেঁপে, লেবু, বেদানা, শসা, লাউ, মরিচ ও সবজি চাষ করবেন।
আব্দুল লতিফের পেয়ারা চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছেন সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের প্রসাদ কালুয়া গ্রামের এমদাদুল হক। ৮৮ শতক জমির চারদিকের আইলে এবং জমির মাঝখানে সাত-আটটি সারিতে লাগিয়েছেন প্রায় ৪০০ থাই পেয়ারার চারা, ৩০০ উন্নত জাতের লেবু, ৬০টি বারি জাতের আমের চারা ও ৫০টি চায়না থ্রি লেবুর চারা। এসব চারার মাঝে ফাঁকা জায়গায় আবাদ করছেন আদা, লালশাক, পুঁই, লাউ, পাটশাক, করলাসহ বিভিন্ন সবজি। ফলে সারা বছর বিভিন্ন ফসল তুলতে পারবেন তিনি।
এভাবে বারোমাসি ফল ও মিশ্র ফসল আবাদ করে অনেক কৃষক জমির নিবিড়তা ৫০০ শতাংশের উপর নিয়ে গেছেন! (বছরে তিনটি ফসল হলে সে জমির নিবিড়তা ৩ শতাংশ বলা হয়)। এতে করে যেমন ১২ মাস ফসল সংগ্রহ করা যাচ্ছে, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগবালাইয়ের কারণে ফসল একেবারে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও কমছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, এক একর জমিতে মিশ্র ফল, সবজিসহ মসলাজাতীয় ফসল চাষ করে কৃষক নিজের মিটিয়ে বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কৃষককে একটু কৌশলী হতে হবে। জমিতে ৮-১০টি প্লট করে প্লটের পাশ দিয়ে ১২ মাস উৎপাদনশীল ফল যেমন: থাই পেয়ারা, বেদানা, লেবু, কলা, পেঁপের চারা লাগাতে হবে। আর প্লটের মাঝে শসা, লাউ, বেগুন, করলা, মরিচ, সজিনা চাষ করতে হবে। কিন্তু এ সবজি চাষে কৃষককে অবশ্যই নাবি ও আগাম জাতের সবজি চাষ করতে হবে। এতে করে এসব ফসলের ভালো দাম পাবেন কৃষক। কেননা নাবি ও আগাম জাতের ফসল যখন উৎপাদন হবে, তখন সেই ফসল বাজারে থাকবে না।
মিশ্র ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে জানিয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, কৃষকদের লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি বছর কৃষি মেলার আয়োজন করা হয়। মিশ্র ফসল চাষের বিষয়টি দুয়েক জায়গায় শুরু হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
সুত্র:বণিক বার্তা, অক্টোবর ০৪, ২০১৮