লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
শুধু পেটের পীড়ায় নয়, আরও বেশ কিছু জটিল রোগের চিকিৎসাতেও কাঁচা কলার জুড়ি নেই। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ ফলটিতে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, পটাশিয়াম, বিটামিন বি৬, ভিটামিন সি এবং আরও নানা সব উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে শরীরের নানা উপকার হয়ে থাকে।
কিন্তু মজার বিষয় হলো এ সম্পর্কে অনেকের কোনো ধারণা নেই। এ জন্য কাঁচা কলা গুণাগুণ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা হলো –
১. শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে : বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত একটা করে কাঁচা কলা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানের মাত্রা যেমন কমে, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। আর একবার যদি ইমিউন সিস্টেমের শক্তি বাড়ে, তখন ছোট-বড় কোনও রোগই যে ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না, তা তো বলাই বাহুল্য।
২. রেসিস্টেন্স স্টার্চের ঘাটতি মেটে : ছোট-বড় নানা রোগ থেকে বাঁচাতে দৈনন্দিন যে যে পুষ্টিকর উপাদানগুলোর প্রয়োজন পড়ে, রেজিস্টেন্স স্টার্চ তার অন্যতম। তাই তো শরীরে যাতে এ উপাদানটির ঘাটতি কখনও না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এ কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে কাঁচা কলা। কীভাবে? বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে কাঁচা কলায় যে পরিমাণে রেজিস্টেন্স স্টার্চ উপস্থিত রয়েছে, তা শরীরে এই উপাদানটির ঘাটতি মেটানোর জন্য যথেষ্ট! তাই তো বলি বন্ধু, শরীরকে যদি দীর্ঘ দিন সুস্থ রাখতে হয়, তাহলে প্রতিদিনের ডায়েটে কাঁচা কলাকে রাখতে ভুলবেন না যেন।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে : কাঁচা কলায় উপস্থিত রেজিস্টেন্স স্টার্চ হজম হতে সময় নেয়। ফলে বহুক্ষণ ক্ষিদে পায় না। আর ক্ষিদে না পেলে খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমতে শুরু করে। ফলে শরীরে ক্যালরির প্রবেশ ঘটে কম। আর এমনটা দীর্ঘদিন ধরে যখন হতে থাকে, তখন ওজন কমতে সময় লাগে না।
৪. পেটের রোগের প্রকোপ কমায় : কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শুধু পেট খারাপ নয়, যারা প্রায়শই গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তারা কাঁচা কলাকে কাজে লাগিয়ে আরোগ্য লাভ করতে পারেন।
৫. শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় : কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ডায়াটারি ফাইবার, যা রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে থাকে, সেই সঙ্গে আর্টারির কর্মক্ষমতারে বাড়িয়ে তোলে। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি নানাবিধ রোগ দূরে থাকতেও বাধ্য হয়।
৬. ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে থাকে : কাঁচা কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। বরং সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে কাঁচা কলা খেতে পারেন। তবে ইচ্ছা হলে এ বিষয়ে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতেই পারেন।
৭. ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে : গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা কলায় উপস্থিত পটাশিয়াম, শরীরে প্রবেশ করার পর ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। সেই সঙ্গে শিরা-উপশিরায় তৈরি হওয়া প্রেসারকেও কমিয়ে ফেলে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই আপনার পরিবারে যদি হাই ব্লাড প্রেসারের মতো রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে নিয়মিত কাঁচা কলা খেতে ভুলবেন না।
৮. পটাশিয়ামের চাহিদা মেটে : এক কাপ কাঁচা কলায় প্রায় ৫৩১ এম জি পটাসিয়াম থাকে, যা পেশী গঠনে উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি নার্ভ এবং কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। রক্তে যাতে কোনও ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান থাকতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে কাঁচা কলায় উপস্থিত পটাশিয়াম। তাই যে কোনও মৌসুমে যদি শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হয়, তাহলে প্রতিদিন ডায়েটে কাঁচা কলাকে অন্তর্ভুক্ত করুন।
৯. পুষ্টির ঘাটতি দূর হয় : খাবারে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদানগুলো যাতে ঠিক মতো শরীরের কাজে লাগতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে কাঁচা কলায় উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান। ফলে নিয়মিত এ ফলটি খেলে অনায়াসেই পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। আর এমনটা হওয়া মাত্র শরীরের কর্মক্ষমতা যে বাড়ে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
১০. শরীরে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে : বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে ইন্টেস্টাইনে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে নানাবিধ পেটের রোগও দূরে পালায়।
সূত্রঃ allbanglanews