নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি পুরনো ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হন। আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। এভাবেই শুরু হয় তাঁর শহর জীবনের পালা। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানম-ির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটির দারোদ্ঘাটন হয়। পরবর্তীতে যা পরিণত হয় বাঙালির তীর্থ ভূমিতে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারবর্গ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বাড়িতেই ছিলেন।
১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই তাঁর রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসাবে তিনি আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ঐ বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং পাঁচশ’ নেতা কর্মী আহত হন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
পরবর্তীকালে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ হাসিনার এবারের জন্মদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসহায়, গরিব ও দুঃখী মানুষের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচি। এদিন বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাঁর জন্মদিনটি উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করবে আওয়ামী লীগ।