আব্দুল মালেকঃ
ট্রাক্টরের চাকায় দিনমজুর সাহেদুল মিয়ার সংসার যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। সারাদিনের দিনমজুরীরর টাকা দিয়ে চলছিল ৫ সদস্যের সংসার। টানাপোড়ানোর লেগেই থাকতো সংসারে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তাদের। এর মাঝেও ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করার স্বপ্ন বুনে সে। স্ত্রী রাশেদার কষ্টের মাঝেও যেন কোন আক্ষেপ নেই। বড় ছেলে রায়হান চর বজরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণি আর ছোট ছেলে রাকিব খামার বজরা মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সবার ছোট রিফাত (৩) এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি।
আজ সোমবার বাবার লাশ যখন দাফন করার প্রস্তুতি চলছিল তখন বাড়িতে শোকের মাতম চলছিল। রিফাত শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে বাবার প্রিয় মুখের দিকে। স্ত্রী রাশেদা বাকরুদ্ধ। কি হবে আগামি দিন গুলোতে। সব কিছুই যেন আজ শেষ হয়ে গেল। এভাবেই শেষ হল একটা দিনমজুর পরিবারের আগামী দিনের সব স্বপ্ন। ওরা তিন ভাই কি পারবে লেখাপড়া শিখে বাবার স্বপ্ন পুরন করতে? সেটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতেই বলে দিবে।
গত রবিরাব (২ সেপ্টেম্বর ২০১৮) রাত ৮ টা। কে জানতো দানব ট্রাক্টর মহূর্তে কেড়ে নিবে তাজা প্রাণ। শ্যালক নয়া মিয়া নতুন অটো রিক্সা কিনবেন। সাহেদুল মিয়া সঙ্গী হল তার। কুড়িগ্রাম শহরে রিক্সা কিনে তাকে সিটে বসিয়ে দিয়ে রওনা দেন উলিপুর অভিমুখে। যখন কুড়িগ্রাম-উলিপুর সড়কের হ্যালিপ্যাড নামক স্থানে পৌঁছিলেন, তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি নাইট কোচ। হঠাৎ করে নাইট কোচের পিছনে থাকা দানবরুপী ট্রাক্টরটি ওভারটেক করতে গিয়ে ধাক্কা দেয় তাদের রিক্সায়। ছিটকে পড়ে সাহেদুল মিয়া। আর মহূর্তে চাকায় পিষ্ট হয় সে। ঘটনার কথা বর্নণা করে ডুকরে কেঁদে উঠে নয়া মিয়া। সব শেষ। এভাবেই শেষ হয়ে গেল সাহেদুলে জীবন প্রদীপ। সাথে সাথে পরিবারটাও নিঃস্ব হয়ে গেল। কিভাবে চলবে সাহেদুলের সংসার।
এসব অনুমোদনহীন যানবাহন প্রতিনিয়তই কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ গুলো। কিন্তু রাস্তা চলাচলের অনুমতি না থাকলেও কিভাবে চলে এসব নছিমন, করিমন, ভটভটি, ট্রলি আর ট্রাক্কর ? এ অদৃশ্য চলাচলের অনুমতি দেয়া প্রশাসনেই পারেন বন্ধ করতে। কিন্তু কেমন করে বন্ধ হবে। মোটর সাইকেল চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে অথচ এসব যানবাহন চালাতে তা লাগেনা। অদক্ষরাই প্রতিনিয়ত সড়কে মৃত্যুর মিছিল বানাচ্ছে আর প্রশাসন নীরব। সাহেদুল মিয়া (৩৮) উপজেলার বজরা ইউনিয়নের খামার বজরা গ্রামের ফুল মিয়ার পূত্র। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ৩ শতক বসতভিটেই সাহেদুল, ৩ ভাই ও বাবা-মাসহ বসবাস করেন।