নিউজ ডেস্ক: পাটের বীজ বোনার জন্য প্রয়োজন শুকনো জমি। অথচ কুড়িগ্রামে প্রায় বছরই দেখা যায়, এ সময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে প্রচুর। আবার যখন পাট কেটে জাগ দেয়ার সময়, তখন প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। তাছাড়া সংকট রয়েছে ভালোমানের বীজেরও। বাজারে যে বীজ পাওয়া যায়, অনেক সময়ই তা থেকে চারা গজায় না। এসব কারণে লোকসানের ঝুঁকি এড়াতে পাট আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা। তাদের অনেকেই এখন পাটের বদলে ধান আবাদের চিন্তা করছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, একসময় কুড়িগ্রামের কৃষকরা পাটের ওপর নির্ভরশীল হলেও বর্তমানে অবস্থা পাল্টে যাচ্ছে। চলতি বছর পাটের বীজ বোনার সময় বৃষ্টিপাত বেশি হয়। যে কারণে কৃষকরা সময়মতো বীজ বুনতে পারেননি। ফলে চলতি বছর জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি। চলতি বছর নয় উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ৬৭৪ হেক্টরে। অথচ ১০ বছর আগে কুড়িগ্রামে পাটের আবাদ হতো এর প্রায় দ্বিগুণ।
সরেজমিন জানা যায়, কয়েক বছর আগেও জেলার অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিগুলোয় কৃষকরা পাট আবাদ করতেন। কিন্তু সেসব জমিতেই এখন পাটের পরিবর্তে ধানের আবাদ করছেন তারা। কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান, ধান আবাদে লোকসানের চিন্তা কম। কিন্তু পাট আবাদ করতে গিয়ে প্রতি পদে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। বীজ বোনার সময় অতিবৃষ্টি এ দুশ্চিন্তার অন্যতম। একই সঙ্গে ভালোমানের বীজ নিয়েও সংকট রয়েছে। বাজারে যেসব বীজ পাওয়া যায়, সেগুলো অনেক সময়ই নিম্নমানের হয়। বীজ খারাপ হলে চারা গজায় না। তখন লোকসান অবধারিত। তারপর পাট কেটে জাগ দেয়ার সময়ও পানি সংকট দেখা দেয়। বৃষ্টি না হলে খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় জাগ দেয়ার মতো জলাশয় পাওয়া যায় না। মূলত এসব কারণেই পাট চাষে আগ্রহ কমে আসছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, পাট চাষে বিড়ম্বনা অনেক। বীজ রোপণের পর বৃষ্টি বেশি হলে গাছ বাড়তে পারে না। চলতি বছরও বৃষ্টির কারণে পাটের ফলন তেমন ভালো হয়নি। পাট কেটেও বিপদে পড়েছি। বর্ষা মৌসুম হলেও বৃষ্টির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। এ বছর ৫০ শতক জমিতে পাট আবাদ করেছি। আগামীতে আর আবাদ করব কিনা ভাবছি।
একই কথা জানান রাজারহাট উপজেলার টগরাইহাট এলাকার আহসান হাবিব। তিনি বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করে বিপাকে পড়েছি। পানির অভাবে জাগ দিতে পারছি না। এর থেকে ধান আবাদ করলে কোনো দুশ্চিন্তা থাকত না।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ ভালোমানের নতুন পাট বিক্রি হচ্ছে ২০০০-২২০০ টাকায়। তবে দাম ভালো হলেও পানির অভাবে কৃষকরা পাট গাছ থেকে আঁশ ছাড়িয়ে বাজারে আনতে পারছেন না।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলায় পাটের আবাদ কমে যাচ্ছে সত্যি। এবার বীজ বপনের সময় অত্যধিক বৃষ্টিপাত হয়। ফলে জমি তৈরি করলেও কৃষকরা পাটের বীজ বপন করতে পারেননি। এজন্য লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। তবে পাটের আবাদ কমলেও জেলায় ধানের আবাদ বেড়েছে।
সুত্র:বণিক বার্তা, আগস্ট ১৭, ২০১৮