নিউজ ডেস্ক:
এলাচ চাষে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নার্সারি মালিক রেজাউল ইসলাম। ছোট ও বড় এলাচ চাষে সফলতা পেয়েছেন তিনি। এখন এ মসলা চাষ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। তার দেখাদেখি আশপাশের উপজেলার কৃষকরা চারা সংগ্রহ করে এলাচের বাগান করছেন। অনেক ছোট পরিসরে শুরু হলেও এ উদ্যোগের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটাতে পারলে এলাচে দেশের আমদানিনির্ভরতা অনেকখানি কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
বর্তমানে ২২টি দেশ থেকে নয় ধরনের মসলা আমদানি করা হয়। প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ টন মসলা আমদানি হয়, যার বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে এলাচ অন্যতম। দেশের মসলার বাজার দখলে শীর্ষে আছে চীন। এরপর আছে মসলার দেশ ইন্দোনেশিয়া। ভারতের অবস্থান ৩ নম্বরে। ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, বিশ্বে ১৭ জাতের এলাচ রয়েছে। দেশে আমদানি হয় অন্তত ১৩ জাতের। বন্দর দিয়ে ৯৯ শতাংশ এলাচ আমদানি হয় গুয়াতেমালা থেকে। বাকি ১ শতাংশ ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে। প্রতি বছর গড়ে ১৬৭ কোটি টাকার ২ হাজার ৬৯৭ টন এলাচ আমদানি করা হয়।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার জাদুর চর ইউনিয়নের চুলিয়ার চর গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, আট বছর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমায় শ্রীলংকার এক নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি এলাচ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এ বিদেশীই পরের বছর ইজতেমায় রেজাউলের জন্য এলাচের দুটি চারা ও কয়েকটি বীজ নিয়ে আসেন। এর পরই শুরু হয় রেজাউলের এলাচ চাষ প্রকল্প।
রেজাউল ইসলামের ‘স্বপ্ন জয় নার্সারি’ ঘুরে দেখা গেছে, নার্সারির একটা পাশজুড়ে শটিবনের মতো এলাচের বন। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ছড়া উপরে উঠে এসেছে। প্রত্যেকটি ছড়ায় কাঁচা এলাচ ঝুলছে। রেজাউল জানান, প্রতিটি ছড়া শুকানোর পর সেখান থেকে ৩৫ থেকে ৫০টি এলাচ পাওয়া যায়। মাত্র এক শতক জমিতে ১০-১৫টি চারা রোপণ করেছিলেন। এখন সেখান থেকে এক হাজারেরও বেশি গাছ জন্মেছে। নার্সারি ও বাড়িতে মিলে প্রায় এক হাজার গাছে ফল এসেছে।
তবে সহজেই এ সফলতা ধরা দেয়নি। রেজাউল জানান, প্রথম তিন বছর কোনো ফল আসেনি। তার পরও ধৈর্য হারাননি। নিয়মিত পরিচর্যা করে গেছেন। অবশেষে গত বছর উৎপাদন শুরু হয়েছে। তিনি এখন উৎপাদিত এলাচে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। তাছাড়া প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। সেখানে থেকে ভালো আয় হচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকায় জাতীয় বৃক্ষমেলায়ও তিনি এ এলাচ গাছ প্রদর্শন করেছেন।
রেজাউলের অনেক প্রতিবেশীও এলাচ চাষের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে আব্দুল আউয়াল জানান, রেজাউলের নার্সারি থেকে চারা কিনে বাড়িতে রোপণ করেছেন। গাছ বড় হয়েছে, কিন্তু এখনো ফল আসেনি। আশা করছেন, আগামী বছর ফলের দেখা পাবেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, আমি রৌমারী উপজেলার রেজাউল ইসলামের ‘স্বপ্ন জয় এলাচ চাষ প্রকল্প’ সরেজমিন ঘুরে দেখেছি। তিনি এলাচ চাষে সফলতা দেখিয়েছেন। কৃষি বিভাগ তার এলাচ চাষ সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেবে
সুত্র:বণিক বার্তা, আগস্ট ১২, ২০১৮