নিউজ ডেস্ক: ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতারণা ও হয়রানি দিন দিন বেড়েই চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কাছের মানুষই এর সঙ্গে জড়িত থাকে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। নিজের আইডি ও পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না। আর সাইবার নিরাপত্তার জন্য সতর্কতা ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল রাজধানীর সিএ ভবনে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ ও টেক ব্যাক দ্য টেক, বিডিওএসএন আয়োজিত ‘ব্যক্তিগত ও পেশাগত নিরাপত্তার জন্য সাইবার নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট দেওয়ান নুরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক লাফিফা জামাল, রবি’র জেনারেল ম্যানেজার কানিজ ফাতেমা ও ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাঈদ নাসিরুল্লাহ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান ও রাইট টাইম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান ভূঁইয়া। মুনির হাসান বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যে কোনো জায়গায় ই-মেইল বা ফেসবুকে ঢোকা যাবে না। যেখানে-সেখানে ওয়াইফাই ব্যবহার করার জন্য নিজের ই-মেইলে লগইন করা যাবে না। নানাভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতারণা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের ছবি অন্যজনে ব্যবহার করে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো কাছের মানুষরাই করে থাকে।
তৌহিদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সাইবার ঝুঁকির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ আর ৩০ শতাংশ বাইরের। নিজের আইডি ও পাসওয়ার্ড স্বামী বা স্ত্রীকেও দেওয়া ঠিক নয়। তিনি হয়তো না জেনেই এমন কোথাও লগইন করলেন যার কারণে আইডি ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তথ্যই সম্পদ। তাই বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই দক্ষ আইটি জনবল থাকা জরুরি। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে।
অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই ইন্টারনেট নিরাপত্তার বিষয়ে জানাতে হবে। সচেতন করতে হবে। বাচ্চারা এখন স্কুলে যাওয়ার আগেই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তাই সে সময় থেকেই তাদের ইন্টারনেটের নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক করে তুলতে হবে। তা না হলে আমাদের বাচ্চারাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশের আট শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করত। বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সারা বিশ্বেই হ্যাকিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। আমাদের এখানে টাকা-পয়সার লেনদেন কম বলে এখনও সেভাবে হ্যাকিং হচ্ছে না। কিন্তু আমরা যখন আরও উন্নত হব তখন সেই ঝুঁকি আমাদের জন্যও হয়ে যাবে। তাই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তৈরি রাখতে হবে।
ডিএমপি’র সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাঈদ নাসিরুল্লাহ বলেন, অনেকে না জেনেই সাইবার অপরাধ করছে। তারা একটু সচেতন হলেই মারাত্মক অপরাধের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মোট মামলা হয়েছে ১২৫টি। এর মধ্যে তারা নিষ্পত্তি করেছেন ২৮টি, যেখানে ৬৮ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মামলা আছে ১১২টি, নিষ্পত্তি হয়েছে পাঁচটি, সাজা হয়েছে ১৭ জনের। এছাড়া এখনও পাঁচ হাজারের বেশি অভিযোগ পড়ে আছে, যেগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে।
সুত্র:শেয়ার বিজ