আব্দুল খালেক ফারুক:
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ও পার্শ্ববর্তী রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে এ বছর ১২ কোটি টাকার লটকন উৎপাদিত হয়েছে। এ দুটি এলাকায় ভরা মৌসুমে লটকনের মোকাম থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মণ লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
গত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা কম থাকলেও ফলন ভালো হওয়ায় লটকন চাষিরা এবার বেশ লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
লটকন ব্যবসায়ী কাশেম, মনির, জাহাঙ্গীর ও আলতাফ জানান, তারা গত ১০-১২ বছর ধরে লটকনের ব্যবসা করছেন। সুস্বাদু ফলটির চাহিদা ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশি। বর্তমানে কাঁঠালবাড়ি ও ছিনাই ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে লটকন চাষ হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন এখান থেকে নৈশকোচের ছাদে করে প্রায় ২০০টি লটকনের খাঁচা ঢাকা, সাভার, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন আড়তে চলে যাচ্ছে।
প্রতিটি খাঁচায় গড়ে ১০০ কেজি লটকন ভরা হয়। গড়ে ৮০০ টাকা মণ হিসেবে প্রতিদিন চার লাখ টাকার লটকন পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রায় এক মাস ধরে ফলটির এই কারবার চলছে। সেই হিসেবে এ বছর ১২ কোটি টাকার লটকন উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
টাঙ্গাইল থেকে আসা ব্যবসায়ী শহীদ জানান, তারা বাগানে আগাম লটকন কিনেছেন। তবে দাম কম হওয়ায় লাভ করতে পারছেন না। বর্তমানে বাগান ও স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ লটকন ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা মণ দরে কিনে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, সুপারি গাছের ফাঁকে নামমাত্র পরিচর্যা আর খরচ করেই লাখ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করছেন অনেক চাষি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক (৫৪) সফল লটকন চাষি হিসেবে সবার নজর কেড়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে তার বাবা পাঁচ একর জমিতে সুপারিসহ অন্য ফলমূলের বাগান করেন। বাগানের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে কিছু লটকন গাছ লাগান। গত ১৮ বছর ধরে এসব গাছ ফল দিতে শুরু করে। বর্তমানে ২০০টি লটকন গাছে লটকন উৎপাদিত করা হচ্ছে। এ বছর লটকন উৎপাদিত হবে তিন লাখ টাকারও বেশি।
কৃষক আবু বক্কর আরো জানান, সারা বছর বাগানের পেছনে খরচ পড়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। শুষ্ক মৌসুমে দুই-একবার সেচে প্রদান, মুকুল আসার সময় দুই-তিনবার কীটনাশক স্প্রে এবং গাছের গোড়ায় সামান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা ছাড়া লটকন চাষে আর কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। সুপারি বাগানের ছায়ায় ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে লটকন গাছ।
শিবরাম গ্রামের আনোয়ার হোসেন ৭০ হাজার, রাজারহাটের ছিনাই এলাকার দেলোয়ার হোসেন এক লাখ টাকার লটকন বিক্রি করেছেন তারা। পূর্ব দেবোত্তর গ্রামের মহির খোকা ৭০ মণ, মহেন্দ্রনারায়ণ গ্রামের কৌশল চন্দ্র ১০০ মণ লটকন উৎপাদনের আশা করছেন। পাইকাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে লটকন সংগ্রহ করে তা হাটবারে কাঁঠালবাড়ি হাটে বিক্রি করছেন। বেশিরভাগ সময় পাইকাররা কম দামে চাষিদের কাছ থেকে আগাম লটকন কিনে নেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ও রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মাটি লটকন চাষের উপযোগী প্রমাণিত হওয়ার পর অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে লটকন চাষের দিকে। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে উৎপাদন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ষষ্টিচন্দ্র রায় জানান, লটকন চাষ করে অনেকে লাভবান হওয়ায় এবং বিপণনে কোনো সমস্যা না হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর আমের সঙ্গে লটকনের বাম্পার ফলন হওয়ায় দাম কিছুটা কমলেও বাড়তি ফলনের কারণে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
সুত্র:কালের কন্ঠ, ২২ জুলাই, ২০১৮