আব্দুল মালেকঃ
কান্না থামছে না সানুর। বাঁচার আকুতি নিয়ে সবার দিকে ভেঁজা চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সারাক্ষণ। মায়ের কোলে বসে এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে চায় সে। বাবা-মায়ের আদরের সানু দুরারোগ্য পলিআর্থাইটিস নোডোসা (প্যান) রোগে আক্রান্ত। হঠাৎ হাত-পায়ে মাংসপেশী ফুলে যায়। ঘা হয়ে ক্ষত-বিক্ষত শরীরে প্রচন্ড ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদে সব সময়। ৩ বছর বয়সে তার শরীরে এসব লক্ষন দেখা দিলে রংপুর মা ও শিশু ক্লিনিকের চিকিৎসকের পরামর্শে সানুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে জমি-জমা বিক্রি করে স্বর্বস্ব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তার বাবা। মেয়ের চিকিৎসার জন্য সামান্য বেতনের দারোয়ানের চাকুরীও ছেড়ে দিয়েছেন। এখন সবার কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাচ্ছেন। কিন্তু তা কতদিন? সানুকে ১৮ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা চালনোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। প্রতিমাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ব্যয় করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই সানুর বাবার।
উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের ধরনীবাড়ি তেলিপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম রানার মেয়ে সানু (৭)। সে ধরনীবাড়ি হাফিজিয়া মাদরাসায় ২য় জামাতে পড়ে। ঈদুল ফিতরের আগে থেকে সানুকে প্রয়োজনীয় ঔষধ খাওয়াতে না পারায় আবারও আগের মতো তার শরীর ফুলে যেতে থাকে। পায়ের মাংসপেশী ফেটে যায়। প্রচন্ড ব্যথায় ছটফট করতে থাকে। এ অবস্থায় গত ২৬ জুন সানুকে আবারও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয়। ৪ বছর থেকে মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়েছেন তার বাবা। অসুস্থ্য মেয়ে নিয়ে সারাক্ষন অনিশ্চিয়তার মাঝে দিন কাটে মা ইসমোত আরা বেগমের। সানুর এমন অসুস্থ্যতার খবর শুনে রবিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মা অসুস্থ্য সানুকে কোলে নিয়ে বসে আসে। সানু শুধুই কাঁদছে। সানুর মা মেয়েকে কোলে নিয়ে শুধু ঝরঝর করে চোখের পানি ফেলছে। আর যেন পারছেন না তিনি। বড় মেয়ে সোমাইয়া আক্তার উলিপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি লেখাপড়া করে। সানুর বাবা রানা জানায়, চিকিৎসক বলেছেন, সানুকে সুস্থ্য করতে তার চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন। কিন্তু আমি সহায় স্বম্বল সব শেষ করেও মেয়েটাকে বাঁচাতে পারছি না বলেই হাউমাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠেন। বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। সবার চোখে ছলছল পানি। অব্যক্ত একটা কষ্ট চোখের পানিতে চাপা পড়ে। সানু কি বাঁচতে পারবে? কেউ কি এগিয়ে আসবে সানুর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে। আজ মানবতার দিকে তাকিয়ে আছে সানু। সুন্দর পৃথিবী কি সানুকে আগলে রাখতে পারবে?