নিউজ ডেস্ক:
বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। চলতি বর্ষায় জেলার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় তাদের মনে এ আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে বন্যাপরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৬ জুন আগাম প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে জেলা প্রশাসন।
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমার, কালিহাতি, জিঞ্জিরাম, শংকোসসহ ১৬টি নদ-নদী কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। আর এসব নদ-নদীর অববাহিকায় ছোট-বড় চার শতাধিক চর ও দ্বীপচর রয়েছে। এসব চরে বাস করছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেতেই চরাঞ্চলের মানুষজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কেননা বন্যার পানি নদ-নদীর বিপদসীমা অতিক্রম করলেই তা প্রবেশ করবে চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে। ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেলে আর সেখানে থাকার কোনো উপায় থাকবে না। তখন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হবে কোনো বিদ্যালয়ে অথবা উঁচু সড়কে। নদ-নদীর অতিরিক্ত পানির স্রোতে ভেসে যেতে পারে অনেকেরই ঘরবাড়িও। সঙ্গে গবাদি পশুপাখিও।
সদর উপজেলার খেয়ার আলগার চরের মোজাম্মেল হক, এরশাদুল, তৈয়ব আলী, আইয়ুব আলী, আনছার আলী জানান, প্রতি বছর বন্যার সময় চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না। কেননা এ সময়টায় বড় বন্যা হলে এ চর সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে থাকে। ঘরবাড়িতে ছেলেমেয়ে, গবাদি পশু নিয়ে থাকার কোনো উপায় থাকে না। ফলে তাদের বউ-বাচ্চা নিয়ে উঁচু জায়গায় তাবুর নিচে আশ্রয় নিতে হয়। বন্যার সময়টা এভাবেই কাটাতে হয় তাদের।
উলিপুর উপজেলার দইখাওয়ার চরের কালু মিয়া, আবদুস ছালাম, মোহম্মদ আলী, শমসের আলী, শুক্কুর মিয়া জানান, দইখাওয়ার চরে প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। এ চরটি ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় হওয়ায় প্রতি বছর বন্যায় আক্রান্ত হয়ে চরের মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয়। নদীর কিনার ঘেঁষা ঘরবাড়িগুলো পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায়। ফলে বন্যার সময়টা অবর্ণনীয় কষ্টে কাটে তাদের। এবারও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। যে কোনো মুহূর্তে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করতে পারে। এ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি আটটি ওয়ার্ডই চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত। প্রতি বছর বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয়।
এদিকে বন্যাপরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৬ জুন আগাম প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে জেলা প্রশাসন। বন্যার সময় ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকা বন্যাকবলিত মানুষদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসাসহ তাদের জন্য করণীয় বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার সময় বন্যাকবলিতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গত বছর ৩৬টি মেডিক্যাল টিম কাজ করেছিল। এ বছর বন্যা শুরু হবে মেডিক্যাল টিমের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। যাতে বন্যাকবলিত মানুষের চিকিৎসাসেবায় কোনো সমস্যা না হয়। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় যাতে সাপের দংশন ও পানিতে ডুবে কোনো শিশু বা বৃদ্ধের মৃত্যু না হয় সেজন্য মেডিক্যাল টিম সতর্ক করবে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, অন্য বছরের মতো জেলায় বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। বন্যাপরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় সব বিভাগ ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা কমিটি করা হয়েছে।
সুত্র:শেয়ার বিজ, জুলাই ৪, ২০১৮