নিউজ ডেস্ক:
ভাঙছে নদী। বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ীসহ আবাদি জমি। ভাঙনরোধে পাউবো কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় গত ২ দিনের ব্যবধানে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে উপজেলার হোকডাঙ্গার হিন্দু পাড়া ও ডাক্তার পাড়া গ্রামের ৫০টি পরিবারসহ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে সদ্য নির্মিত বাঁধটিসহ ৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। অবিরাম ভাঙনের মুখে ঘরবাড়ী সরাতে হিমশিম খাচ্ছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন। গত কয়েকদিন থেকে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে নদী।
জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তার ভাঙন কবলিত হোকডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনের ভয়াবহ রুপ। চোখের সামনে ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল পদ্ম বালা বর্মনীর বসত ভিটা। নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে দালাল পাড়া, কড়াই পাড়া গ্রাম। তিস্তা নদী অববাহিকার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফরা, নন্দু নেফরা, বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা, বাধেঁর বাজার, বগলা কুড়া ও সাতালস্কর গ্রামেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত নাগড়াকুড়া টি-বাঁধসহ ৫টি গ্রাম ও পাইকর পাড়া শ্যামলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২টি মন্দির। হোকডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আব্দুল বারী সহ ভুক্তভোগি অনেকেই জানান, গতবছর থেকে এসব এলাকায় ভাঙন শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এ বছর ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।
থেতরাই ইউনিয়নের ডাক্তার পাড়া গ্রামের বাসিন্ধা সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তারামনি রাণী জানান, ৭ দিন ধরে ওই এলাকায় তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২ দিনের ভাঙ্গনে তার বাড়িসহ পুরো হিন্দু পাড়া ও ডাক্তার পাড়া গ্রাম দু’টি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার বসতবাড়িও নদীতে চলে গেছে।
চলতি ভাঙনে শতাধিক পরিবার ও গত বছর ভাঙনে ৫০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে আরো ৫০টি পরিবার। ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষজন দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। হিন্দু পাড়া ও ডাক্তার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৬৫), মনোরাম চন্দ্র বর্মন (৭৫) ও করিমল চন্দ্র বর্মন (৫৫) জানান, চলতি ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়েছেন। অর্থের অভাবে বাড়িঘর করতে পাচ্ছেন না। এলাকাবাসির দাবি রিলিপ চাই না, ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা চাই।
থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইযুব আলী সরকার জানান, ভাঙনরোধে আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা চাওয়া হয়েছে, তালিকা পেলে ক্ষতিপ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ওই এলাকার ভাঙ্গনরোধে ৩৫ কি.মি. এলাকায় ৭টি ‘টি বাঁধ’ নির্মাণের জন্য ২শ’ ৪২ কোটি টাকার প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।