মোন্নাফ আলী:
উলিপুরে একটি দালাল চক্র হাসপাতালে আসা রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ফলে সরকারের দেওয়া চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার গরিব মানুষ। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ভাঙিয়ে স্যাকমো ডিএমপি চিকিৎক দিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রোগীদের প্রতারিত ও অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা।
হাসপাতাল গেটের ২০০ গজের মধ্যে অনুমোদনহীন ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। পরে হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দিয়ে এক্স-রে ও ডিএমপি (স্যাকমো) চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এমটি ল্যাব, লক্কড়-ঝক্কড় অতি পুরনো মেশিন, নারী এমটির সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ‘নন-এমটি’ লোক দিয়ে কাজ করা, মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট, কোথাও রি-এজেন্ট নেই, রক্ষিত ফ্রিজে মাছ-মাংস রাখা ও অপরিছন্ন পরিবেশে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করা হচ্ছে। এভাবে গরিব রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ লুটে নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম বোরহান উল ইসলাম সিদ্দিকী। তার লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জান্নাত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিঠি দিয়ে লাইন্সেস, পরিবেশের সনদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সনদ, কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা ও নিয়োগপত্র, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম-পদবি, কর্মস্থলের নামসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। অন্যথায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রাখাসহ বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। তাতেও বন্ধ হচ্ছে না দালাল দিয়ে হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নেওয়াসহ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবৈধ কর্মকাণ্ড ও রোগী প্রতারণার কাজ।
অনেক রোগী জানান, তাদের হাসপাতাল থেকে জোর করে নিয়ে আসা হয় এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের ফি নিয়ে স্থানীয় স্যাকমো চিকিৎসক দিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেন। প্রতিবাদ করলে কিছু টাকা ফেরত দেন। এমন হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে অন্তঃসত্ত্বাদেরও চিকিৎসা করা হচ্ছে। ফলে এখানে রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। লুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থকড়ি। তবুও যেন দেখার কেউ নেই।
স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে সরকারি হাসপাতালের গেটের সঙ্গে লাইন্সেস ও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই মারফি ডায়াগনস্টিক সেন্টার,পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা ডিজিটাল ল্যাব, অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জান্নাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শাহীদা ল্যাব ও দেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নামে প্রতারণা করে আসছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে জান্নাত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ওবায়দুল ইসলাম রানু জানান, লাইন্সেসসহ আমাদের সব কাগজপত্র রয়েছে এবং ডিএমপি কোর্স করা স্যাকমোরা রোগী দেখছে, আল্ট্রাসনোগ্রাম করছেন। বর্তমান আইনে তারাও রোগী দেখা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতে পারেন। কিন্তু এরপরও এ ধরনের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. এ এইচ এম বোরহান উল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার দালাল দিয়ে হাসপাতালের রোগী হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; কিন্তু আমরা অসহায়। অনেক চেষ্টা করেও দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারছেন না। ফলে গরিব রোগীরা সরকারের দেওয়া চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোনোভাবে তাদের এ প্র্যাকটিস বন্ধ করা যাচ্ছে না।
কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, জবাব পেলে কার্যকরী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্র:সমকাল, ০১ জুলাই ২০১৮