আব্দুল মালেক:
বেকার হান্নানের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। কষ্টের মাঝেও যেন ভাল থাকার নিরন্তর চেষ্টা। পেশা হিসেবে নিয়েছেন প্রচারণার কাজ। সারাদিনের প্রচারণার কাজে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে ৫ জনের সংসার। টানাপোড়েন লেগেই থাকে। তবুও ৩ সন্তানকে লেখাপড়া করার অদম্য আগ্রহ। প্রচারনা শুরু করেন বাই-সাইকেলে মাইক বেঁধে। ক্লান্তি আর সময় বাঁচানোর জন্য বর্তমানে মোটর সাইকেল কিনেছেন। নিজস্ব মেধায় মোটরসাইকেলে মাইকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংযোজন করে নিজে চালিয়ে প্রচারণা করেন দিনভর। এভাবেই চলছে নিরস্তর জীবন সংগ্রামী হান্নানের সংসার।
বুধবার (২০ জুন ২০১৮) দুপুরে উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের সরফদি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল রাস্তার পাশেই একটি মুদি দোকান। এলাকার লোকজনদের জিজ্ঞাসা করতেই বলে দিলেন, এটাই হান্নানের বাড়ি। সবার প্রশ্ন মাইক লাগবে? ডাক দিতেই বাড়ি থেকে মুচকি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে এলেন। বললেন,মাইক লাগবে? আমি বললাম, না। কথা বলে জানা গেল, ১৯৯৭ সালে দাখিল পাশ করে হান্নান। যথারীতি আলীম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ইংরেজি বিষয়ে ফেল করে। তারপরে বদলে যায় তার জীবন। টানাপোড়েনের সংসারে নিজেকে অসহায় মনে হয়। মস্তিস্ক বিকৃত হয়। পুরো জীবনটাই ওলোট-পালট হয়ে যায়। লেখাপড়া আর হয়নি। জীবন বাঁচাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনসপত্র বাই-সাইকেলে নিয়ে ফেরি শুরু করেন গ্রামে গ্রামে। পাশাপাশি একটি মাইক কিনে তা দিয়ে প্রচারণার কাজও চালাতে থাকেন। এলাকার যেকোন সভা-সমিতির প্রচারণা কিংবা মৃত ব্যক্তির দাফনের খবর মাইকে প্রচার করে থাকেন। মানুষের চাহিদা আর সময়ের কথা বিবেচনা করে বাই-সাইকেল ছেড়ে অটো-বাইকে মাইক বেঁধে প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু তাতে আয় কমে যায়। মাথায় আসে মোটর সাইকেলে প্রচার করলে কেমন হয়? তাই মোটর সাইকেল কিনে তাতে নিজস্ব চিন্তায় সামনে ও পিছনে হর্ণ আর ব্যাটারী ও মেশিন সিটের সাথে বেঁধে প্রচার শুরু করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। এভাবেই সবার কাছে পরিচিত হন মাইক হান্নান হিসেবে। ফেরি করার কাজ বন্ধ করে বাড়ির সাথে গড়ে তোলেন মুদি দোকান। তার অবর্তমানে স্ত্রী লতিফা বেগম দোকান চালান। এভাবেই চলতে থাকে তার সংসার।
হান্নান জানান, তার বড় মেয়ে হারেচা আক্তর হেনা ৪র্থ শ্রেণি, ছোট মেয়ে হাফচা আক্তার হিমু শিশু শ্রেণি আর ছেলে লুৎফর রহমান নূরানী ২য় জামাতে পড়ে। তার বাবার নাম দবির উদ্দিন। হান্নান জানান, ন্যাশনাল সার্ভিসের গচ্ছিত টাকা দিয়ে মোটর সাইকেল কিনে নিজের বুদ্ধি দিয়ে এ কাজ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। এখন দিনে ৫শত থেকে ৮ শত টাকা আয় হয়। তবে প্রতিদিন হয় না, মাসে ১০/১২ দিন প্রচারণার কাজ হয়। তবে তার কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। এভাবেই ভাল আছেন তিনি।