আব্দুল মালেক
উলিপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজ শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রম মারত্মক ব্যাহত হচ্ছে। কার্যতঃ নানা কারণে কলেজটি এখন যেন রাজা-জমিদারদের পোঁড়ো বাড়ীতে পরিনত হয়েছে। জাতীয়করণের ৩১ বছরে শুধু আইটি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হলেও আর কোন বিষয় খোলা হয়নি। বেসরকারী কলেজ গুলোতে অনার্স কোর্স চালু হলেও এখানে তা হয়নি। এক যুগ ধরে ১৩ টি বিভাগের ২৬ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যক্ষসহ বাংলা, ইংরাজী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও দর্শন বিভাগে শিক্ষক পদ শুন্য রয়েছে । ডিগ্রীতে গুচ্ছ না মেলায় ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগ এক যুগ ধরে ছাত্র/ছাত্রী শুণ্য। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর ১৯ জনের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ৬ জন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে উলিপুর বিডি কলেজ নামে স্থাপিত হয় তৎকালীন কাচাঁরী বাড়ী ভবনে। পরে ছাত্র-ছাত্রিদের চাহিদা ও অভিভাবকদের দাবির মুখে প্রায় ৭ একর জমির উপর কলেজটি স্থাপন করা হয়। সে সময়ে গাছপালায় ঘেরা সুবিশাল ক্যাম্পাস ছিল শিক্ষার্থীর পদচারনায় মুখরিত। উলিপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার দরিদ্র শিক্ষার্থীরা কলেজটিতে পড়াশুনা করতো। বর্তমানে শিক্ষক সংকটের কারণে কলেজটিতে পাঠদান কার্যক্রম লাঠে উঠেছে। গাছগাছলিতে ঘেরা ক্যাম্পাসটি আজও আছে কিন্তু নেই শিক্ষার্থী।
১৯৮৭ইং সালে কলেজটি জাতীয়করণের সময় ইংরাজী, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, অর্থনীতি, দর্শন ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, গনিতসহ ১৩টি বিষয়ে ২৬ জন শিক্ষক ও ১৯ কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। কিন্তু জাতীয় করণের পর পর্যায়ক্রমে স্থানীয় শিক্ষকরা পদোন্নতি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। কেউ আবার অবসরে চলে যান। ফলে অধ্যক্ষসহ শুন্য পদ গুলো পুরণ হয়নি দীর্ঘ সময়েও। শিক্ষা বিভাগের অবহেলা আর উদাসীনতার কারনে কলেজটিতে যুগোপযোগি বিষয় খোলা হয়নি। শিক্ষক সংকট নিরসনসহ অনার্স কোর্স খোলার দাবী দীর্ঘদিন থেকে উপেক্ষিত হয়ে আসছে। ফলে লাগাতার শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমতে থাকে। বর্তমানে এইচএসসিতে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলে ৫ শ’ ২৮জন ও ডিগ্রীতে ১৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ডিগ্রীর ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগে গুচ্ছ না মেলার কারণে গত এক যুগ ধরে ওই দুটি শাখায় কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি।
জাতীয়করণের পর ২০ বছর অধ্যক্ষ ও ১২ শিক্ষকের পদশুণ্য। ডিগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্র প্রত্যাহার ও অনার্স কোর্স চালু না করার ক্রমেই কলেজটি শিক্ষার্থী শুণ্য হয়ে পড়ছে। ডিগ্রী ৩য় বর্ষের শিক্ষাথী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানায়, অনার্স কোর্স খোলা হবে এ আশায় কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন স্যার না থাকায় ক্লাশেই হচ্ছে না। এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী মোছাঃ সুষ্মিতা আকতার জানায়, অধিকাংশ বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় বাইরে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে।
ইংরাজী বিভাগের একমাত্র শিক্ষক নাজমা আখতার জানান, একজনের পক্ষে এত শিক্ষাথীর্র ক্লাশ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আবু তাহের জানান শিক্ষক, কর্মচারী সংকট ও অনার্স কোর্স না খোলার কারণে কলেজটি অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। কলেজটিতে অনার্স খোলাসহ ডিগ্রি কেন্দ্র পুনঃবহালের দাবি জানান।