আব্দুল মালেকঃ
উলিপুরে নানা প্রতিকূলতার কারণে পাট চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এ অঞ্চলের চাষিরা। চলতি মৌসুমে উপজেলায় মাত্র ১ হাজার শ’ ৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছে। ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধ না করেই পাট ক্রয় কেন্দ্র গুলো বন্ধ করে দেয়। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত এসব পাট চাষিরা ক্রমেই লোকসানের মুখে পড়ে পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিবছর ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় প্রায় ৩হাজার ৫ শ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করে থাকে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার ১ শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কম হয়েছে। এক সময়ে সোনালী আঁশ পাটকে ঘিরে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে উলিপুর হাট। সে সময় এ হাটে হাজার হাজার মন পাট কেনাবেচা হতো। কিন্তু আজ তা শুধুই স্মৃতি। উপজেলা কৃষি অফিসার অশোক কুমার রায় জানান, বিভিন্ন কারণে কৃষকরা পাট চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
উলিপুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ি খামার এলাকার বাবু নামের এক কৃষক বলেন,পাট চাষ না করলে যেন কৃষক হিসেবে পূর্ণতা আসে না। অথচ এখন পাট চাষ করে লোকসান করতে হচ্ছে। এ এলাকায় জমির পর জমি শুধু পাট আর পাট ছিল। এখন কেউ আর পাট চাষ করে না। আঃ করিম , আব্দুল আজিজ , আলতাফ, হাছানসহ অনেক কৃষক জানান, শ্রমিক সংকটের কারনে পাট চাষে বেশি খরচ হয়। কিন্তু বাজারে পাটের দাম না থাকায় এবারে আর পাট চাষ করিনি। এছাড়া সেচ দিয়ে পাট গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হত। সে জমি গুলোতে এখন পানি জমে থাকে। তারা আরও বলেন, পাটের বীজ, রাসায়নিক সার ও পাট পরিচর্যায় পূর্বের তুলনায় এখন খরচ অনেক বেশি। কিন্তু পাট উৎপাদন হয় অনেক কম। পাট পঁচিয়ে ও শুকিয়ে তা বাজারে আনলে কাঙ্খিত দামও পাওয়া যায় না।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যে সকল জমিতে পাট চাষ হয়েছে, সেগুলো এখনও বেড়ে উঠে নি। বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে প্রতিটি পাট গাছের উচ্চতা ২-৩ ফিট হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে জৈষ্ঠ্য মাসে পাট গাছের উচ্চতা এ বছর দেড় থেকে দুই ফিট লক্ষ্য করা গেছে। অনেক কৃষকই বৈশাখ মাসে পাট ক্ষেতে নিড়াঁনি দেয়া শুরু করলেও অতিবৃষ্টির কারনে সিংহভাগ পাট ক্ষেত পরিচর্যা সম্ভব হয়নি। এর উপর প্রাকৃতিক দূর্যোগ হিসেবে শিলাবৃষ্টি বর্ষণের কারণে পাট চাষে মারাত্বক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে এ অঞ্চলে পাট চাষিরা পাট ঘরে তুলতে পারবে না বলে আশঙ্খা করছেন। এছাড়া বুড়িতিস্তা নদী পাড়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমান জমিতে পাট চাষ হলেও এবছর জলাবদ্ধতার কারণে তা হয়নি। যারা পাট চাষাবাদ করেছেন, তাদের জমির পাটগাছও তলিয়ে আছে। তারা জানান, অনেকে বুড়িতিস্তা নদী অবৈধ দখলে নিয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রাম পাট অধিদপ্তরের উন্নয়ন সহকারী মোছাঃ রওশন আরা বেগম বলেন, মুলত লোকসানের কারনেই পাট চাষ করতে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। পাট চাষিদের সঠিক সময়ে সরকারিভাবে প্রণোদনা দিলে আবারও আগের মতো পাট চাষে এগিয়ে আসবে চাষিরা। সেইসাথে কৃষকদের ন্যায্যমূল্যর বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।