আব্দুল মালেকঃ
উলিপুরে সরকারি ভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু না হওয়ায় ইরি-বোরো মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের মুখে পড়েছে কৃষকরা। শ্রমিক সংকটের কারনে ধান কাঁটা-মাড়াইয়ের খরচ মেটাতে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে বর্গাচাষিরা। ধান ক্রয় শুরু না হওয়ায় বাজার গুলো ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে একর প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। উপজেলায় ধান ক্রয়ের বরাদ্দ না থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা লাভের আশায় ধান চাষ করলেও লোকসানের মুখে পড়েছেন।
এদিকে বৈরি আবহাওয়া ও ঘনঘন বৃষ্টিপাতের কারনে কৃষকরা নেটের জালের উপর ধান শুকাচ্ছেন। সরকারিভাবে প্রতি মন ধান ১ হাজার ৪০ টাকা ও প্রতি কেজি চাল ৩৮ টাকা নির্ধারণ করেছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খালেদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১ হাজার ৩‘শ ১৮ মেঃ টন চালের বরাদ্দের অনূকুলে আগামী ২০ মে‘র মধ্যে মিল মালিকদের সাথে চাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদন হওয়ার পর বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে।
তবে এখন পর্যন্ত ধান ক্রয়ের কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। এদিকে মৌসুমের শুরুতে বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে এবার একর প্রতি অনেক বেশি খরচ করতে হয় কৃষকদের। বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধান ক্ষেতে নেক-ব্লাষ্ট ছত্রাক আক্রমন করায় ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে যায়। ধান পাঁকা শুরু হলে এ অঞ্চলে শিলাবৃষ্টিতে অনেক ধান ক্ষেত দুমড়ে-মুচড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ পরিস্থিতিতে কৃষকরা ধান কাটা-মাড়াই শুরু করলে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়।
উপজেলার ধরনীবাড়ী এলাকার কৃষক আঃ আউয়াল জানান, তাকে ৫০ শতক জমির ধান ৭ হাজার টাকা দিয়ে কাটতে হয়েছে। উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের আঃ ছাত্তার ,দলদলিয়া ইউনিয়নের শমছেলসহ অনেক বর্গাচাষি বলেন, লাভের আশায় ধান চাষ করে এবার ঋনের টাকায় শোধ হবেনা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বললে তারাও একই কথা বলেন। এদিকে বাজারে ধানের চাহিদা না থাকায় কৃষকদের কম দামে ধান বিক্রি করে শ্রমিকদের মজুরীসহ ধারদেনা মেটাতে হচ্ছে। উপজেলার ফাঁসিদাহ বাজারের ব্যবসায়ী আঃ গণি জানান, মহাজনদের চাহিদা না থাকায় তারা প্রতিমন মোটা ৫ ‘শ টাকা ও চিকন ধান ৬ ‘শ টাকা দরে কিনছেন।
অপরদিকে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৈরি আবহাওয়ার কারনে অনেক কৃষক নেটের জাল বানিয়ে তার উপর ধান শুকাচ্ছেন। ফলে সকাল থেকে শুরু হয় কৃষাণীদের ধান শুকানোর ব্যস্ততা। এছাড়া অনেক পাঁকা সড়কে কাঁকডাকা ভোর থেকে ধানের ঢিবি ফেলিয়ে রাস্তা দখলের প্রতিযোগিতাও চলে।
কথা বলে জানা যায়, অনেকে গোয়ালের গরু, হাঁস-মুরগী বিক্রি করে আবার কেউ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে ধান চাষ করেন। কৃষকরা জানান, প্রতি ৩০ শতক জমিতে ধান উৎপাদন করতে অঞ্চল ভেদে কৃষকদের খরচ হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা । তবে বর্গাচষীদের ক্ষেত্রে জমির বর্গাংশসহ খরচ পরেছে প্রায় ১৬ থেকে ১৯ হাজার টাকা। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন হচ্ছে ৬ মেঃটন। এতে ধান বিক্রি করে জমির মালিকরা কিছু লাভবান হলেও লোকসানের মুখে পড়েছেন বর্গাচাষীরা । বর্গাচাষিদের সোনালী স্বপ্নের পরিবর্তে ঋনের বোঝা ঘাড়ে চাপায় তারা বর্তমানে চরম হতাশা ও দিশেহারা হয়ে পরেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসন বাজার গুলো মনিটরিং করছেন।