শবে বরাতের রাতটি মুসলিম সমাজে গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে । শবে বরাতের রাতটির সীমাহীন গুরুত্ব ও ফজিলতের কারণেই মুসলিম সমাজ ইবাদত-বন্দেগি করে উদযাপন করে থাকে। এ রাতের ইবাদত-বন্দেগি মহান আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন। শবে বরাতের রাতের ফজিলতও অনেক বেশি। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বিছানায় না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম। জান্নাতুল বাকিতে (মদিনার সর্ববৃহৎ কবরস্থান) গিয়ে তাঁকে পেলাম। তিনি আকাশ পানে মাথা উঁচু করে ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি ভেবেছ, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) তোমার ওপর জুলুম করবেন? হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম তেমন কিছু নয়। আমি ভেবেছিলাম, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা নিসফে শাবানের রাতে (শবে বরাতে) সৃষ্টির প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন এবং কালব গোত্রের বকরির পশমের চেয়েও অধিক মানুষকে ক্ষমা করে দেন।(সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস :১৩৮৯, মুসনাদে ইসহাক, হাদিস : ৮৫০, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬০১৭)
আমদের সমাজে শবে বরাত পালন করা হয়। বছর ঘুরে একবার মহিমাম্বিত রাতটির আগমন হয় বিধায় দীর্ঘদিনের ব্যবধানে অনেকেই রাতটির করণীয় আমল সম্পর্কে জানতে চান। আসলে শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আমল ইসলামি শরিয়ত বিধিবদ্ধ করেনি। এ রাত্রিতে যে আমলই করা হোক না কেন তার মর্যাদা নফল। সুতরাং নফল যেকোনো আমলই এ রাতে করা যেতে পারে। যেমন নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সাদাকাহ, কবর জিয়ারত ইত্যাদি। কেউ কেউ শবে বরাতে বিশেষ কোনো সুরা দিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নফল নামাজ পড়ার বিষয়ে বলে থাকেন। যারা এমনটি বলেন, তাঁরা তাঁদের অজ্ঞতার কারণেই এমন কথা বলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যেকোনো সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করলেই হবে। আর দিনের বেলাতে অর্থাৎ ১৫ শাবানের দিনে নফল রোজা রাখার বিষয়টি হজরত আলী (রা.) বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং এ রোজার সওয়াবও অনেক বেশি। বিশেষ করে শবে বরাতে মহান আল্লাহর দরবারে ইস্তেগফার ও মুনাজাত করতে হবে একনিষ্ঠ ভাবে।
লেখক : মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ,
পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ