আব্দুল মালেকঃ
উলিপুরের বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে আধা-পাঁকা ধানের সমারোহ। বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের। কিন্তু কৃষকের মুখে সে হাসি যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নেক-ব্লাস্ট ছত্রাকের কারণে ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আতংকিত হয়ে পড়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কীটনাশক ঔষধ ছিটিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, সব জাতের ধান ক্ষেতে এ ছত্রাক আক্রমন করেনি। বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধান ক্ষেতে এ ছত্রাক আক্রমণ করেছে। তবে আক্রমণ করার আগে স্প্রে করলে কিছুটা রোধ করা সম্ভব। তবে এ জাতের ধান দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ হওয়ায় তা অনেকটা সংবেদনশীল হয়ে গেছে। তাছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারনেও এমনটা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ১৩ টি ইউনিয়নে ২০ হাজার ৪ শত ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সঠিক সময়ে চারা লাগানো নিবিড় পরিচর্যা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, যথা সময়ে সেচ দেওয়া, সার সংকট না থাকায় উপজেলায় চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা ছিল।
উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমিতে নেক-ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রমণ করেছে। এসব জমির ধানের শীষ সাদা হয়ে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান দেখে আতংকিত হয়ে পড়েছে। অনেক বর্গা চাষি এ পরিস্থিতিতে সর্বশান্ত হয়ে পড়বে।
উপজেলা গুনাইগাছ ইউনিয়নের পুর্ব কালু ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক কবির উদ্দিন, আব্দুল ওহাব, আবুল হোসেনের এক বিঘার ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার দলবাড়ী, পুটিগাড়ী ও নাউয়ার ডোবা বিলের প্রতিটি ২৮ জাতের জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষক কমল উদ্দিন জানালেন গত বার তার ৩ একর জমির ২৮ জাতের সম্পূর্ণ ধান ক্ষেত ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে যায়। ঐ ইউনিয়নের কাঠালবাড়ি এলাকার কৃষক পংকজ সরকার বলেন, তার এক একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ঔষধ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। তবে রামধন গ্রামের ভোলা মাষ্টার ও রাজবল্লভ গ্রামের তিতু মাষ্টার সহ ১৫-২০ জন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, তাদের জমিতে নেক-ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রমণ করেছিল, সময়মতো কীটনাশক স্প্রে করাতে অনেক কমে গেছে।
এছাড়া উপজেলার দলদলিয়া, থেতরাই, বজরা, হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধান ক্ষেতে নেক-ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এ পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি আফিসার অশোক কুমার জানান, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। তবে চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে আগামী মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। তাই যেসব জমির ধান ৮০ ভাগ পেঁকেছে সেইসব কৃষক ভাইদের তা দ্রুত কর্তনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।