তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
আজ সোমবার বহুল কাঙ্ক্ষিত ফোর-জি বা চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবা চালু হচ্ছে । সন্ধ্যায় মোবাইল অপারেটরগুলো ফোর-জির লাইসেন্স বুঝে পাবে। এরপরই অপারেটরগুলো চালু করবে ফোর-জি সেবা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবে অপারেটগুলোর মধ্যে লাইসেন্স হস্তান্তর করা হবে। এরপর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর-জি চালু করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আজ চালু হলেও মোবাইল অপারেটরগুলো কয়েক দিন আগে থেকেই পরীক্ষামূলক ফোর-জি সেবা দিচ্ছে। শুরুতে প্রযুক্তিগত সমস্যা কিছুটা থাকবে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে তা ঠিক হয়ে যাবে।’
এরআগে গত মঙ্গলবার ঢাকা ক্লাবে ফোর-জির তরঙ্গ নিলাম হয়। নিলাম থেকে ১৫.৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক। এর মধ্যে বাংলালিংক ১০.৬ এবং গ্রামীণফোন ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে থ্রি-জি ইন্টারনেটের গড় গতি ৩ দশমিক ৭৫ এমবিপিএস (মেগাবিটস প্রতি সেকেন্ড)। আর বিশ্বে ফোর-জি প্রযুক্তির গড় গতি ১৬ দশমিক ৬ এমবিপিএস।
ভারতে ফোর-জির গড় গতি বর্তমানে ৬ দশমিক ১৩ এমবিপিএস। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশে ফোর-জির গতি ৯ থেকে ১৪ এমবিপিএসের মধ্যে। ফোর-জি গতিতে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দুই দেশ হলো সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া।
বিশ্বজুড়ে ৩৮ লাখ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ৫ হাজার কোটি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে একেকটি দেশের ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি নির্ধারণ করে ওপেনসিগন্যাল।
অপরিদিকে গ্রাহক, নেটওয়ার্ক, সেবার ক্ষেত্রে দেশের একেক অঞ্চলে একেক মোবাইল ফোন অপারেটরের আধিপত্য। যার বিচারে অপারেটরগুলো অঞ্চলভিত্তিক গুরুত্বে অনেক সেবা পরিকল্পনা করে থাকে।অপারেটরগুলো মধ্যে ঢাকাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় গ্রামীণফোন। রাজধানী তাদের প্রধান শক্তি হলেও গ্রাহক সংখ্যায় সেরা অপারেটরটি দেশের সব জায়গায় সুষম উন্নয়নে যে চেষ্টা করছে তা দৃশ্যমান। গ্রামীণফোন ঢাকার পর সিলেট এবং উত্তরবঙ্গেও শক্ত অবস্থান নিয়ে আছে।ঢাকা এবং উত্তরাঞ্চলে সুবিধা করতে না পেরে চট্টগ্রামেই খুঁটি শক্ত রাখতে চেষ্টা করে আসছে রবি। ফোরজি চালুর ক্ষেত্রেও এই চেষ্টার ব্যতিক্রম করেনি তারা। তবে গোটা চট্টগ্রাম অঞ্চল, নোয়াখালি, কুমিল্লা এবং ঢাকাকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে অপারেটরটি। খুলনাও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলালিংকের কাছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম তো থাকছেই, খুলনা তৃতীয় গ্রাহক সেরা অপারেটরটির কাছে রয়েছে বাড়তি গুরুত্বের জায়গায়।
নেটওয়ার্ক তৈরির ক্ষেত্রেও বাংলালিংক অন্য সব এলাকার চেয়ে খুলনাকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়। রবি যেমন গুরুত্ব দেয় চট্টগ্রাম বিভাগকে। ঢাকায় সবার উপস্থিতি ভাল হলেও গ্রামীণফোনের জন্য সবচেয়ে শক্তির জায়গা।আর এভাবেই গ্রাহক গুরুত্বের বিচারেই ফোরজি সেবার জন্যে অপারেটরগুলো তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করছে।এ নিয়ম মেনেই যেন বাংলালিংক ফোরজি নেটওয়ার্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে খুলনাকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছে। সোমবার সেবা চালু করার পর মঙ্গলবার খুলনায় তারা একটি সংবাদ সম্মেলনও করবে।
একইভাবে চট্টগ্রামেও রবির রয়েছে নানা পরিকল্পনা। খুলনা-চট্টগ্রামের গ্রাহকদেরকে গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই বাংলালিংক-রবি এমনটা করছে বলে জানা গেছে। আঞ্চলিকতার এই বিষয়টি নিয়ে রোববার গ্রামীণফোনের এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা অবশ্য বলেন, সকল গ্রাহক তাদের কাছে সমান। কোনো অঞ্চলের গ্রাহককে তারা বেশী গুরুত্ব দিতে গিয়ে কোনো অঞ্চলকে তারা অবজ্ঞা করতে চান না। অপারেটগুলোর অনেক কর্মকর্তা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই যেখানে গ্রাহক বেশী সেখানে সেবাও আগে আগে যাবে।
সুত্রঃ Allbanglanews.Net