তালাত মাহামুদ রুহানঃ
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি ফুলের প্রীতি বন্ধনী ও বসন্ত কথনের মাধ্যমে রাজধানীর চারটি স্পটে বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
বসন্ত মানে নবীন প্রাণ, নবীন উৎসাহ, নবীন উদ্দীপনা, যৌবনের সঞ্জীবনী রসে পরিপুষ্ট। বসন্তের আগমনে অশোক পলাশের রঙিন বিহ্বলতায় ও শিমুল কৃষ্ণচূড়ার বিপুল উল্লাসে, মধুমালতী ও মাধবী মঞ্জুরির উচ্ছল গন্ধমদির প্রগলতায় সারা আকাশতলে গন্ধ, বর্ণ ও গানের তুমুল কোলাহলে লেগে যায় এক আশ্চর্য মাতামাতি। তাই কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেছেন, কুহেলী ভেদিয়া-/জড়তা টুটিয়া/এসেছে বসন্তরাজ।/নবীন আলোকে/নবীন পুলকে/সাজিছে ধরণী আজ।
আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। দক্ষিণা সমীরণে, ভ্রমরের গুঞ্জনে আকুল করা ব্যাকুল নিসর্গে আজ প্রাণের দোলা। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহতান, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরোহী অন্তর। কবি তাই বলেছেন ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে…’। তবে বসন্তের সমীরণ বলছে এ ঋতু সব সময়ই বাঙালির মিলনের বার্তা বহন করে। প্রকৃতির চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ি বন বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠেছে চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লেগেছে রঙের দোলা। হৃদয় হয়েছে উচাটন।
শীতের রথের ঘূর্ণিধূলির আড়াল দিয়ে নবীন সূর্যের আলোয় স্নাত হয়ে বসন্ত আসে। শীতের ত্যাগের সাধনা তো বসন্তের নবজম্মের প্রতীক্ষায়। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে অনন্ত যৌবনা মধুর বসন্তে আজ সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই আজ গেয়ে উঠবেন ‘মনেতে ফাগুন এলো..’। বসন্ত তারুণ্যের ঋতু বলেই সবার মনে বেজে ওঠে, কবির ওই বাণী ‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে। ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, পয়লা ফাল্গুন আনন্দের দিনে’।
এই বসন্তের পূর্ণতার দোলা ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সকল বাঙালির ঘরে ঘরে। কোকিলের কুহুতান, দক্ষিণা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন, সব এ বসন্তেই।প্রকৃতির মতো মানুষের মনে ঢেউ খেলে যায় নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা।বসন্ত মানুষের প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি। প্রকৃতির রূপের নেশায় মানুষ পাগলপ্রায়। কিশলয়ের অফুরন্ত উল্লাসের মতো বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে আাসুক অনাবিল সুখের পরশ। বাংলাদেশ হোক অপূর্ব মায়া নিকেতন।