শফিকুল ইসলাম বেবু : কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার টাঙ্গালিয়াপাড়া গ্রামে গত ৫ মাস ধরে খোলামেলা জায়গায় অনুমোদনহীন ‘কার্বন পাউডার’ মিল চালানোর ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন কেমিক্যাল মিশ্রিত প্রতিদিন প্রায় ৭০ টন পাটকাঠি পোড়ানো ছাইভস্ম বাতাসে মিশে শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ গবাদি পশু ও রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে পরিবেশ চরম ক্ষতির মুখে পরায় মিল বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিন ১.২৯ একর জমি উপর নির্মিত চারকল মিলটির ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, শুকুর আলী(১৫)ও আব্দুল মান্নন(১৭)সহ আরো ৫ কিশোর মিলটিতে ছাই ভাঙছেন। পাশে দুটি বয়লারে পোড়ানো হচ্ছে পাটকাঠি। কিছু দুরে ভানু বেগম, পেতি খাতুন নামের দু’জন মহিলা সারা গায়ে কালি মাখা অবস্থায় ছাই শুকাচ্ছে আর মূহুর্মুহু কাশছেন।
মিলের ম্যানেজার শহীদার রহমান জানান, প্রতিদিন এই মিলটিতে প্রায় ৭০ টন পাটকাঠি পোড়ানো হয়। মিলটির অভ্যন্তরে আগুন নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। ইতোমধ্যেই একাধিকবার মিলে অগ্নিকান্ড ঘটেছে। সে সময় পাশের জেলা জামালপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ৭ দিন ধরে চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।
মিলটির বৈধ কোন কাগজপত্র আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মিলটির অংশিদার নুরুল আলম বলেন, লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করা হয়েছে তবে এখনও তা পাইনি।
মিলের পাশের বাসিন্দা সাবেক বিজিবি সদস্য আব্দুল আলিমসহ আরো কয়েকজন অভিযোগ করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই এ চারকল মিলটি স্থাপন করে তা গায়ের জোরে চালানো হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী এলাকার শহিদুর রহমান বিভিন্ন স্থানে মিলটি স্থাপন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় কিছু নেতার সহযোগীতায় রাজিবপুরের লোকালয়ে তা স্থাপন করেছেন।
মিল মালিক শহিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি কারখানা চালু করতে অনেক কিছু লাগে। তাই প্রাথমিক ভাবে পাটকাঠি পোড়ানোর কাজ শুরু করেছি। ফলে স্থানীয় অনেক বেকার নারী পুরুষ কাজ করে টাকা কামাচ্ছে। এটাও তো এক ধরনের জনসেবা।
রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মেস বাহুল আলম বলেন, চারকল মিল লোকালয় থেকে অন্তত ৩ কিলোমিটার দুরে স্থাপন করতে হবে। যা এখানে মানা হয়নি। এছাড়া মিলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় আমরা অনুমোদন দেইনি।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, চারকল মিলের কেমিক্যাল মিশ্রিত ছাই ও ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হচ্ছে বলে শুনেছি।
এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, মিলটির ধোঁয়া জনিত কারনে রোগব্যধি ছড়াচ্ছে মর্মে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্র:ইনকিলাব,২৮ জানুয়ারি, ২০১৮