আব্দুল মালেকঃ
সকাল থেকে সন্ধ্যা জীবন-জীবিকার তাগিদে নিরন্তর ছুটে চলা। চলতে না পারলেও চলতে হয় তাকে প্রতিনিয়ত দু’বেলা দু’মুঠো পরিবারের আহারের জন্য। জন্ম প্রতিবন্ধী গুল্লু ঝড়বৃষ্টি উপক্ষো করে প্রতিদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে সংসাার চালান। কিন্তু তাতেও তার আক্ষেপ নেই। কাঁক ডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজে মাটিতে ছেঁচড়িয়ে ছেঁচড়িয়ে বের হয় সে। এসব প্রতিকূলতায়ও তাকে থামাতে পারেনি। প্রতিবন্ধী গুল্লুর জীবন সঙ্গীনি হিসেবে আসে আরেক প্রতিবন্ধী হামিদা বেগম। তাদের ঘরে আসে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। বাবা মা প্রতিবন্ধী হলেও তাদের সন্তানরা কেউ প্রতিবন্ধী হয়নি। ভিক্ষা করেই ৩ ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। বড় মেয়ে কুলছুম বেগম (১৮) নাজিমখাঁন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবারে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। ২য় মেয়ে মুন্নি আকতার (১৪) ওই প্রতিষ্ঠানে ৮ম শ্রেনীতে ও ছোট ছেলে হাফিজুর রহমান (৯) স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের ৩য় শ্রেনীতে পড়ে। এভাবেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করে বড় করার স্বপ্ন তার।
জানা গেছে, ৬৫ বছর আগে ব্রহ্মপূত্র নদের ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে গুল্লূ আশ্রয় নেয় কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের হোসেনপাড়া গ্রামের তছলিম উদ্দিনের বাড়ীতে। সে জেলার চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল গ্রামের মোবারক হোসেনের পূত্র। গুল্লু তার দূর্বীসহ জীবনের গল্প কাউকেই বলেন না। শুধুই এ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করতেন। আজ সে কষ্টের দিন কিছুটা হলেও শেষ হল। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি ঘর পান। আশ্রায়ন প্রকল্পের কারনে পাল্টে যায় গুল্লু শেখ (৫৫) এর পারিবারিক জীবন। এ ঘরে শুয়েই শান্তির সু-বাতাস বইছে তার পরিবারে।
গত শনিবার গুল্লুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের টিনসেড ঘর। ডাকতেই বেরিয়ে আসে গুল্লু। মুখে হাসির ঝলক, চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ। ঘরের বারান্ধায় বসে ডাকেন পরিবারের সবাইকে। বলেন, ‘আইজ হামাক খুবেই ভাল নাগছে, শেখের বেটি হামাক এ ঘরটা দিছে। মোর কবরটাও এলা মোর বাড়ীত হইবে। কাইও কবারপাবার নয়, হামার কিছু নাই’।
গুল্লুর মত প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরবাড়ী পেয়ে বাস্তুহারা দূর্বিসহ জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে হাতিয়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের বিধবা দিন ভিক্ষারী তারামনি, কলাতীপাড়া গ্রামের আদরী বেগম, নয়াগ্রামের বিধবা দিন ভিক্ষারী আছমা বেওয়া, থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা গ্রামের দিন ভিক্ষারী মকবুল হোসেন সহ ২৭৩ জন।
আশ্রয়হীন এসব পরিবার খুজে পেল নুতুন ঠিকানা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মোঃ ফিজানুর রহমান জানায়, আশ্রায়ন প্রকল্পের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের বাস্তহারা তালিকা মোতাবেক তাদের ঘরবাড়ী প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এসব বাস্তুহারা মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের পুর্নবাসন করা হয়েছে।