বাদশাহ্ সৈকত:
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ভয়াবহ চিকিৎসক সংকট চলছে। প্রতিদিনই সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে শত শত মানুষকে। অনেকে বাড়তি খরচ করে রংপরে চিকিৎসা নিতে গেলেও অধিকাংশ মানুষ গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে এ জেলার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ১৫৯টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১১৬টিই শূন্য। নয়টি উপজেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা চলছে মাত্র ৪৩ জন চিকিৎসক দিয়ে। এ অবস্থায় দেশের সীমান্তঘেঁষা দারিদ্র্র্যপীড়িত এ জেলার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক অধিকার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
বেশি চিকিৎসক সংকট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয়। ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল। কিন্তু সেখানেও রয়েছে চিকিৎসক ও লোকবল সংকট। তার ওপর পুরো জেলার রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার দশা। সদর হাসপতালে ৪২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমানে আছেন মাত্র ১৪ জন। ২১ জন কনসালট্যান্টের পদ থাকলেও রয়েছেন নয়জন এবং মেডিকেল অফিসার ১৮ জনের বিপরীতে আছেন মাত্র দুজন। এছাড়া চক্ষু, নাক-কান-গলা এবং চর্ম ও যৌন বিভাগে চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
অন্যদিকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ১৯টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন তিন থেকে চারজন। এর মধ্যে ফুলবাড়ী ও রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়াই।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর রহমান সরদার জানান, সদর হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তঃবিভাগে আড়াইশ ও বহিঃবিভাগে এক হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা দেয়ার মতো সব উপকরণ থাকলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু তাহের মো. আনোয়ারুল হক অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অবহিত করার পরও নতুন করে চিকিৎসক পদায়ন না করে উল্টো সদর হাসপাতাল থেকে পাঁচজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে।
চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। যাত্রাপুর ইউনিয়নের রোগীর স্বজন শাহিদা বেগম জানান, তিন বছরের শিশু সাজিদকে দেখানোর জন্য টিকিট কেটেছিলেন, কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারেননি। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও রোগীর চাপে ভেতরে যেতে পারেননি। এখন গ্রামের ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। সদর হাসপাতালে আসা বেশির ভাগ রোগী ও স্বজনরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসা না পেয়ে সদর হাসপাতালে এলেও তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না।
এ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, সদর হাসপাতালসহ জেলায় ১৫৯টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে আছে ৪৩ জন। চিকিৎসক সংকটের কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু উল্টো আরো তিনজনকে বদলি করা হয়েছে।
সুত্র:বণিক বার্তা,নভেম্বর ০৮, ২০১৭