আব্দুল মালেকঃ
বুড়িতিস্তা নদীর পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কারিগরি কমিটি গঠন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উলিপুরের আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলন ও দাবীর মূখে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়।
উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল, নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির নেতৃত্বে বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ‘বুড়িতিস্তা বাচাঁও উলিপুর বাঁচাও’ আন্দোলন করে আসছে। এসব আন্দোলনের খবর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসে। এরই প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বুড়িতিস্তা নদীর পানি প্রবাহ অব্যাহত ও দখলমূক্ত করতে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরন করলে সম্প্রতি ডিজাইন সার্কেল-৬ ঢাকা’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুসা নুরুর আহমেদকে চেয়ারম্যান ওকুড়িগ্রাম পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে ৭ সদস্যের এ কমিটির অনুমোদন দেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এক সময় প্রাণপ্রবাহ বুড়িতিস্তা নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল উলিপুর উপজেলা। এই নদী পথ ব্যবহার করেই কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হয় এলাকাটি। খুব বেশি দিনের কথা নয় যখন তিস্তা নদীর এ শাখা নদীতে পানি থৈ থৈ করতো, বড় বড় নৌকা চলতো। আশেপাশের জমিগুলোতে মানুষ তিন ফসলের আবাদ ঘরে তুলতো। সবুজে সবুজে ছিল বুড়িতিস্তার চারিদিক। বুড়িতিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকাও চলতো নদীতে মাছ ধরে। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। ভূমিদস্যূদের ভয়াল থাবায় বুড়িতিস্তা এখন ক্ষীণকায় মরা খালে পরিনত।
জানা গেছে, গত ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার এলাকায় বুড়িতিস্তা নদীর প্রবেশ মুখের স্লইজগেটটি ভেঙ্গে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে বুড়িতিস্তা নদীর প্রবেশমুখ বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে বুড়িতিস্তার পানি প্রবাহ কমে গেলে একশ্রেণীর দখলদার বুড়িতিস্তা নদী দখলের মহোৎসবে নেমে পড়ে। বুড়িতিস্তা নদী ভরাট করে পাঁকা ইমারত তৈরি করতে থাকে।
এ অবস্থায় বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল, নৌ- যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি বুড়িতিস্তা রক্ষায় আন্দোলন শুরু করে। উলিপুরের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রি সহ সর্বস্তরের মানুষ বুড়িতিস্তা নদী বাঁচার আন্দোলনে অংশ নেয়। গত ১৩ মার্চ প্রায় ২ কিঃমিঃ ব্যাপী মানববন্ধন, ২১ মার্চ ১০ কিঃমিঃ ব্যাপী বাই-সাইকেল র্যালি, ১১ এপ্রিল বুড়িতিস্তা নদীতে ব্যতিক্রমী প্রতীকী পানির ঢল ও ২১ মে বুড়িতিস্তা নদীর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা পঁচা ধানগাছ রাস্তায় ছিটিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
এসব কর্মসূচিতে উলিপুরের সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ স্বতঃফূর্ত ভাবে অংশ নেন। এছাড়াও প্রতিনিয়ত পথনাটকসহ বিক্ষোভ মিছিল ও সভা-সমাবেশ করে আসছে আন্দোলনকারীরা। আগামী ১৫ নভেম্বর মোটর সাইকেল র্যালি নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষনা করেছেন বলে জানান উলিপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সাঈদ সরকার। কুড়িগ্রাম পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, কারিগরি কমিটি আগামী ২০ নভেম্বর প্রকল্প এলাকা থেতরাই থেকে চিলমারী উপজেলার রানীগজ্ঞ পর্যন্ত পরিদর্শন
করবেন।