আব্দুল মালেকঃ
সরকারীভাবে মা ইলিশ ধরা নিষেধ থাকলেও ব্রহ্মপুত্র নদে টাকার বিনিময়ে অনুমতি দিচ্ছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ফাঁড়ির পুলিশ। ৭’শ টাকা মূল্যের এই অনুমতিপত্র পেয়ে জেলেরা ডিঙ্গি নৌকায় কারেন্ট জাল নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ব্রহ্মপূত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনে গভীর রাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত শত শত মন ইলিশ মাছ বেচাকেনা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাঝি ও সাধারণ ক্রেতারা এসে ২’শ থেকে ৩’শ টাকা কেজি ধরে সুস্বাদু এ ইলিশ মাছ কিনে মজুদ করছে। জেলেরা জানায়, প্রতিদিন এক একটি নৌকা দেড় মণ থেকে ৩ মণ পর্যন্ত ডিম ভর্তি ইলিশ মাছ ধরছে। মুচকি হাঁসি দিয়ে সোনা মাঝি বলেন, ‘এ্যাতো ইলিশ আগোত কোনদিন মাইরব্যার পাইন্যাই বাহে, মনে হয় হামরা এ্যালা সাগোরোত আছি’। ঘটনাটি ঘটছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপূত্র নদ জুড়ে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, সরকার ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন সময়ে মা ইলিশ রক্ষায় নদ-নদীতে ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ সুযোগে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পদ্মার মা ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে ব্রহ্মপূত্র নদে চলে আসে। আর এ অঞ্চলের জেলেরাও বাধাঁহীন ভাবে এক ধরনের বেআইনি কারেন্ট জাল ফেলে দেদারছে মা ইলিশ ধরছে। এসব মাছ নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক বাড়ির ফ্রিজে রেখে তা কৌশলে ক্রেতাদের কাছে ২ শত থেকে ৩ শত ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে অভিযানে নামে। এতে করে জেলেদের মাঝে ভীতির সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে ব্রহ্মপূত্র নদ বেষ্ঠিত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মোল্লা ও সাহেবের আলগা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই হারুন মিলে ৭ শত টাকার বিনিময়ে টোকেন দিচ্ছেন। এই টোকেন পেয়ে জেলেরা ব্রহ্মপূত্রের সর্বত্রই বাধাঁহীনভাবে সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মা ইলিশ নিধনে মেতে উঠে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের ঐ এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক জেলে প্রতিদিন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা মিলে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতিনিধি ও ফাঁড়ি পুলিশের অসহযোগিতার কারনেই প্রশাসন মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে নদীতে অভিযান চালাতে গেলে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে। গত শনিবার ঐ নদীতে অভিযানের সময় আটককৃত জেলেরা চেয়ারম্যান, মেম্বার ও পুলিশের স্বাক্ষরিত টোকেন প্রদর্শন করেন। এ যেন ‘সরষের মধ্যে ভূত’ পাওয়ার মতো ব্যাপার। এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন টাকা গ্রহনের কথা স্বীকার করে বলেন, ফাঁড়ির পুলিশ জেলেদের হয়রানী করে বলে ৭’শ টাকা করে নিয়ে ফাঁড়ির এস.আই হারুনকে দিয়ে জেলেদের টোকেন প্রদান করা হয়েছে। সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মোল্লার সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এস.আই হারুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অভিযানে আছি, এখন কথা বলার সময় নেই’। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, জনপ্রতিনিধি ও ফাঁড়ি পুলিশের অসহযোগীতার কারণে অভিযান সফল করা যাচ্ছে না।