প্রকাশিতব্য আবু হেনা মুস্তফা রচিত “উলিপুরের ইতিহাস” প্রকাশ না হতেই উলিপুরে বইটি নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়েছে পাঠক সমাজে। শুধু উলিপুরে থেমে থাকেনি বইটির আলোচনা বর্তমানে ফেসবুকের কারণে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ও বিশ্বময়। লেখককে ফোন দিয়ে জেনে নিচ্ছে বিভিন্ন তথ্য। সাম্প্রতিক সময়ে উলিপুর ডট কমের সহ. সম্পাদক জরীফ উদ্দীনের ফেসবুক টাইমলাইনে বইটি নিয়ে পোষ্ট দিলে পাঠকের আনাগোনা হয় উল্লেখ করার মত। উলিপুর ডট কমের পাঠকের জন্য কোন রকম পরিবর্তন না করে পোষ্টটি তুলে ধরা হল।
উলিপুরের ইতিহাস
আবু হেনা মুস্তফা
“উলিপুরের ইতিহাস” মোট ২৩ টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা শিরোনাম আছে। প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম: ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’। বাংলাদেশকে না জানলে উলিপুরকে জানবেন না। তাই খুব সংক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনামা হলো: ‘উলিপুরের প্রাচীনত্ব’। খুব প্রাচীন কাল থেকে বিশেষ করে “মহাভারত” – এর সময় থেকে কী উলিপুরের অস্তিত্ব ছিলো? মহাভারতে গাইবান্ধার নাম পাওয়া যায়। অনেক পরে আমাদের উলিপুর থেকে গাইবান্ধা জেলার অর্ধেক শাসিত হত। তাহলে কে প্রাচীন – উলিপুর, না গাইবান্ধা? আরও থাকছে ‘উলিপুর’ নামকরণের বিবর্তনের ধারাবাহিক বর্ণনা। উলিপুর শ্মশানের উত্তরদিকে লুপ্ত রাজবাড়ী সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা।
১৫০৬ খ্রীস্টাব্দে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ কেন উলিপুরে এসেছিলেন? তিনি কি এখানে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন? তার নির্মিত মসজিদ কোনটি? তার স্থাপিত “নাসখ” পদ্ধতির শিলালিপিটি উলিপুরে কিভাবে পাওয়া গেলো? এটা আবার কীভাবে রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে গেল? এ প্রস্তরলিপিটি কে সেখানে নিয়ে গেলো? এই লিপির অনুবাদ কী? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে গ্রন্থটিতে। এই অধ্যায়ে আরও আছে: উলিপুর কীভাবে কুচবিহার আর কামরূপ রাজ্য ভুক্ত হলো? কে একে বিয়ের যৌতুক হিসেবে দান করলো? মোঘল আমলে উলিপুরের অবস্থা কী ছিলো? মোঘল সেনাপতি কর্তৃক উলিপুরের জোতদার এবং সাধারণ জনগণের নির্যাতনের কাহিনী সংক্রান্ত তথ্য স্যার যদুনাথ সরকার কীভাবে ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগার থেকে উদ্ধার করলেন?
তৃতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম: “কাশিমবাজার”। এ অধ্যায়ে জানতে পারবেন কাশিমবাজার সম্পর্কে। এই কাশিমবাজারের সঙ্গে আমাদের উলিপুরের গভীর বন্ধন আছে। কেননা পলাশী যুদ্ধের পর থেকে (৩ সেপ্টেম্বর, ১৭৭৯ খ্রী.) ১৯৫২ খ্রী. পর্যন্ত আমাদের উলিপুর কাশিমবাজার রাজ এস্টেটের অধীনে ছিলো। তাই এ এলাকার তথ্য জানার প্রয়োজন আছে।
চতুর্থ অধ্যায়ের শিরোনাম: “উলিপুরের ভৌগোলিক বিবরণ”। শিরোনামেই বোঝা যায় এই অধ্যায়ে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১২ জুন, ১৮৯৭ খ্রী. বিকাল ৫.১৫ মিনিটে প্রায় ৫ মিনিট স্থায়ী এক ভূমিকম্পে কীভাবে আমাদের প্রিয় এই উলিপুরের ভূ-প্রকৃতি বদলে গেলো – তা জানতে পারবেন। এই ভূমিকম্পে কোন কোন নদী মারা গেলো, কোন কোন খাল-বিল হারিয়ে গেলো- তা জানতে পারবেন। সঙ্গে থাকছে এই এলাকার পরিবেশ- প্রতিবেশ বিষয়ে তথ্য।
পঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম: “উলিপুরের মানুষের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়”। এ এলাকার মানুষ যে প্রাক-আর্য মঙ্গোলীয় এবং অস্ট্রিক বা ভেড্ডাপ্রতিম- এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা আছে।
ষষ্ট অধ্যায়ের শিরোনাম: “উলিপুরের ভাষার বৈচিত্র্য”।
“উলিপুরের নদী ও বিলের কথা” – হলো সপ্তম অধ্যায়ের শিরোনাম। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদী সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই তিনটি নদী উলিপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত। নদী তিনটির উৎপত্তি এবং কোন কোন এলাকা দিয়ে উলিপুরে এসেছে- তা জানতে পারবেন। ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর উৎসমুখ আবিষ্কারের রোমান্সকর তথ্য রয়েছে এই অধ্যায়ে।
অষ্টম অধ্যায়ের শিরোনাম: “ধামশ্রেণী থেকে বাহারবন্দ হয়ে উলিপুর”। কয়েকশত বছরব্যাপী এই ধামশ্রেণী কীভাবে সমগ্র বাহারবন্দ পরগণার প্রশাসনিক মূলকেন্দ্র ছিলো- তা জানতে পারবেন। ১৭৮৮ খ্রী. ৭ মে বাগ্মী এডমন্ড বার্ক ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সে কী জন্য ধামশ্রেণী তথা বাহারবন্দ নিয়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিলেন- তা জানতে পারবেন। শত শত বছরের ক্রমবিবর্তন হতে থাকা ধামশ্রেণী সম্পর্কে এই প্রথম একটি মাত্র গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। রাণী সত্যবতী কে? দুজন রঘুনাথ রায়ের মধ্যে কে তার স্বামী? কীভাবে উলিপুর তাদের হাতে গেলো? রাণী ভবানী কীভাবে উলিপুরের জমিদার হলো?- এই বিষয়গুলো আছে এই অধ্যায়ে।
নবম অধ্যায়ের শিরোনাম: “রাণী ভবানী, বাহারবন্দ তথা উলিপুর”
রাণী ভবানী আমাদের জমিদার হওয়ার পর কী কী দুর্যোগ তার জীবনে নেমে এলো? এ সময়টিতে মুর্শিদাবাদের কোন কোন নবাবের অধীনে আমরা ছিলাম, ওয়ারেন হেস্টিংস কে? কান্তনন্দী কে? কীভাবে তাদের পরিচয় হলো? ভারতীয় নবপুঁজির জনক কান্তবাবুর হাতে কেমন করে উলিপুর চলে গেলো? এবং এর বিভিন্ন আইনগত প্রক্রিয়া বিষয়ে জানতে পারবেন। ১৭৭৯ খ্রী. ৩ সেপ্টেম্বর কেমন করে দলিল সম্পাদন করে রাতারাতি উলিপুরের মালিক হয়ে গেলো কান্তনন্দী এবং এর প্রতিক্রিয়ায় রাণী ভবানী আদালতে কী কী অভিযোগ পেশ করেছিলেন?- তা জানতে পারবেন। ১৭৮৮ খ্রী. ১৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সংসদে উলিপুর, রাণী ভবানী আর কান্ত বাবুর নামে কে কে আলোচনা করলো, ওয়ারেন হেস্টিংস শুধুমাত্র উলিপুরকে নিয়ে কেমন নাস্তানাবুদ হয়ে গভর্ণর জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, কত বছর এই মামলাটি চলেছিলো- তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এই অধ্যায়ে।
দশম অধ্যায়ের শিরোনাম: “বাহারবন্দ তথা উলিপুর নিয়ে আরো কিছু কথা”। এই অধ্যায়ে কাশিমবাজার রাজ এস্টেটের জমিদারদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক বিষয় নিয়ে রোমাঞ্চকর আলোচনা থাকছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষেরা কীভাবে উলিপুরের জমিদারদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়েছিলেন- এ অধ্যায়ে তা জানতে পারবেন।
আমরা জানি মহারাণী স্বর্ণময়ীর স্বামী মহারাজা কৃষ্ণনাথ নন্দী আত্মহত্যা করেছিলেন – কিন্তু তিনি কেন এবং কীভাবে, কোথায়, কখন আত্মহত্যা করলেন, আত্মহত্যা করার আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নে কেন তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বাড়ী তল্লাসী করেছিলো- তা জানতে পারবেন।
মহারাণী স্বর্ণময়ীর জীবনের অনেক অজানা বিষয় এই অধ্যায়ে উঠে এসেছে। তার অন্দরমহলের অনেক কথা জানতে পারবেন। এই প্রথম কোন গ্রন্থে সেই উইলটি নিয়ে আলোচনা থাকছে- যা আমরা বিকৃতভাবে শুনে আসছি। ১২ টি ধারায় বিভক্ত সেই উইলের প্রতিটি ধারা জানতে পারবেন। আমাদের উলিপুর নিয়ে মহারাজা কৃষ্ণনাথের একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন কী অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছিলো? এই উইলটি কী প্রিভি কাউন্সিলে টিকেছিলো?
অধিক তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট করুন/ফোন করুন 01714763190 ( আবু হেনা মুস্তফা)
(গ্রন্থটির অন্যান্য অধ্যায়ের বিষয়বস্তু থাকছে আগামী পোস্টে।)