আব্দুল মালেকঃ
বানের পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর। আশ্রয় হয়েছে বাঁধের রাস্তায়। স্ত্রী, ২ ছেলে, ৭টি গরু ,৫টি ছাগল ও একটি ঘোড়াসহ ঘাদাঘাদি বসবাস। স্বাভলম্বিতার স্বপ্নে নিজে ভিজলে গবাদি পশুগুলোর জন্য বানিয়েছেন টিনের চালা। এভাবেই অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের রাস্তায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিমবজরা গ্রামে গিয়ে কথা হয় আশ্রিত রোস্তম আলীর সাথে। তিনি বলেন,‘কষ্ট করি গরু ছাগল গুলা পুশনো,আইজ হামার যে অবস্থা, আশায় আছনো ঈদোত বেঁচে কিছু ট্যাকা পামো, তা বোধ হয় আর হইল না’।
নদ-নদী পানির বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে দূর্ভোগের মধ্যে পড়ে। আশ্রিত এসব মানুষজন এখন তাদের গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে।
রোস্তম আলীসহ অনেকেই জানান, আগের বন্যায় সব খড় নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকজন মিলে টিনের চালা তুলে গরু রাখলেও বাকিরা সবাই পলিথিন টানিয়ে আবার অনেকে খোলা আকাশের নিচে তাদের গবাদি পশু রেখেছেন। অনেকে অভিযোগ করেন, চুরি যাওয়ার ভয়ে রাত জেগে গরু পাহারা দিচ্ছেন। খোলা আকাশের নিচে এখন গবাদি পশুর সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছেন বানভাসি পরিবার গুলো।
বাজার গুলোতে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার আগে ভূসির মন ছিল ৯’শ ৬০টাকা, এখন ১হাজার ৪’শ ২০টাকা। ১মন গুড়া ছিলো ৩৫০ টাকা এখন ৫’শ টাকা। ১’শ খড়ের মুঠার দাম ছিলো ২’শ টাকা, এখন ৪’শ ৫১০ টাকা। তারা জানান, নিজেদেরই খাবার জুটছে না, তার উপর চড়া দামে খাদ্য কিনতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর গরুর খুরা রোগসহ না রোগ বালাই দেখা দিতে পারে।
ভারপ্রাপ্ত বজরা ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ বলেন, এবারের বন্যায় পুরো ইউনিয়ন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু গুলোর দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। যেসব গবাদি পশু খোলা আকাশের নিচে আছে, বৃষ্টি শুরু হলে করুন অবস্থা হয়। সরকারি ভাবে মানুষের মাঝে যেভাবে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে, তার পাশাপাশি যদি গবাদি পশুর জন্য খাদ্য ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য পলিথিন দেয়া হতো তাহলে অনেকটাই কৃষকরা উপক্রিত হতো।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার আব্দুল আজিজ প্রধান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বন্যায় উপজেলায় ২৪ হাজার ৮’শ ৮৫ গবাদি পশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আর গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য চাহিদা দিয়েছে ১২৬ মেট্রিক টন।