আব্দুল মালেকঃ
ব্রহ্মপূত্র, তিস্তা, দুধকুমর ও ধরলা নদীর বানের পানি উপজেলাকে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ফেলেছে। এক রাতের ব্যবধানে ৪টি নদ-নদীর বানের পানিতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়ন ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপূত্র নদ বেষ্টিত। ধরলা নদীর পানি স্বরণ কালের ভয়াবহ আকার ধারন করায় তার ইউনিয়নের ২২ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরম আকার ধারন করছে। ব্রহ্মপূত্র বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৫২ টি চর তলিয়ে যাওয়ায় ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বিএসসি জানান, চর গুজিমারী, চর দাগারকুটি, বাবুরচর, গাবুরজান, নয়াডারা, শ্যামপুর, তাঁতিপাড়া, হাতিয়া ভবেশ, অনন্তপুরসহ নদ অববাহিকার বেশিরভাগ গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দলদলিয়া ইউনিয়নের চর রতিদেব, ঠুটাপাইকর, চর ঘাটিয়ালপাড়া, কর্পূরাখাস, চর অর্জুন, অর্জুন, লালজুম্মা, চাপড়ারপাড়, রেডক্রস, বসনিয়াপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ঠুটাপাইকর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কর্পূরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠুটাপাইকর উচ্চ বিদ্যালয়সহ ঠুটাপাইকর বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বেশির ভাগ রাস্তা তলিয়ে যাওয়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সি জানান।
গতকাল রোববার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বন্যা কবলিত দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দূর্গত মানুষের ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। বজরা ইউনিয়নের সাদুয়াদামার হাট, বিরহিমচর, পূর্ববজরা, চর বজরা, খামার বজরা গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ১৫হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
বজরা কাশিমবাজার সড়ক যেকোন মহুর্তে ভেঙ্গে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। গুনাইগাছ ইউনিয়নের টিটমা, কাজিরচক, সন্তোষ অভিরাম, শুকদেবকুন্ড, রাজবল্ল গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। থেতরাই ইউনিয়নের জুয়ান সতরা, খারিজা লাটশালা, চর গোড়াইপিয়ার, রামনিয়াশা, গোড়াইপিয়ার মধ্য চর, চর হোকডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকার অনেক কৃষকের পাটজাগ পানির তোড়ে ভেসে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার অশোক কুমার রায় জানান, উপজেলার ১০ হাজার ১ শত হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত, ১ শত হেক্টর জমির বীজতলা ও ২ ’শ হেক্টর জমির শাক-সবজি তলিয়ে গেছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলার ২৩ হেক্টর জমির ১৬৫ টি পুকুরের ৩৫ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার খন্দকার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল রোববার পর্যন্ত ৮ ইউনিয়নে ২৬ মেঃ টন খয়রাতি চাল বিতরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিরিা বলেন, দূর্গত মানুষের তুলনায় ত্রাণ সহায়তা খুবই অপ্রতুল।