।। নিউজ ডেস্ক ।।
অর্থনীতির মন্দা, ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার, মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই নতুন শিল্পকারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ব্যবসায়ীরা এটিকে “বৈষম্যমূলক” বলে আখ্যায়িত করে বলছেন, এতে নতুন বিনিয়োগকারীরা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বেন এবং বিনিয়োগ পরিবেশ আরও খারাপ হবে।
রোববার বিইআরসি নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। আগে এই দাম ছিল ৩০ টাকা। এছাড়া, নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি গ্যাস ব্যবহার করলে বাড়তি দাম দিতে হবে। পুরোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়ে গ্যাস ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, একই শিল্পখাতে পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে গ্যাস পাবে, আর নতুনদের বাড়তি দাম দিতে হবে—এটি অসামঞ্জস্য তৈরি করবে। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, “ব্যবসায়িক নীতিতে ধারাবাহিকতা না থাকায় বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলো চাপ সামলাতে পারলেও নতুন উদ্যোক্তারা হার মানতে বাধ্য হচ্ছেন।”
বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির তুলনায় ইতিমধ্যেই কম, এবং তা আরও হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২৪.৫২%, যা ২০২৩-২৪ সালে নেমে এসেছে ২৩.৯৬%-এ। এছাড়া, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২১.৩০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৪.৪০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন (৬.৮২%) রেকর্ড করা হয়েছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে ২৫%। ব্যাংকঋণের সুদহার ১৫% ছাড়িয়ে যাওয়ায় নতুন প্রকল্পে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমেছে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যায়, যা বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। ২০২৩ সালে শিল্পখাতে গ্যাসের দাম ১৭৮% বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু সরবরাহ বাড়েনি। এবার নতুন দাম বাড়ানোয় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, “একই শিল্পে দুই ধরনের দাম বৈষম্য তৈরি করছে। এটি বিনিয়োগের জন্য নেতিবাচক সংকেত।”
বর্তমানে গ্যাসের কারিগরি ক্ষতি প্রায় ৩%, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য মাত্রা (০.২০-০.৩০%) থেকে অনেক বেশি। বিইআরসির তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩৭ কোটি ঘনমিটার গ্যাস “কারিগরি ক্ষতি”র নামে অপচয় হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১০,৮৭০ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা হোক এবং দুর্নীতি বন্ধ করা হোক। মীর নাসির হোসেন বলেন, “গ্যাস কোম্পানিগুলোর অদক্ষতার দায় কেন ব্যবসায়ীদের ওপর চাপানো হচ্ছে?”
এ অবস্থায়, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ প্রতিবন্ধকতা দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্রঃ প্রথম আলো।